ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভিআইপিরা নেয় বাড়তি সুবিধা, ভুক্তভোগী জনসাধারণ

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
ভিআইপিরা নেয় বাড়তি সুবিধা, ভুক্তভোগী জনসাধারণ ছবি: জি এম মুজিবুর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অতিরিক্ত সুবিধা নিতে ভিআইপিরা ভঙ্গ করছেন ট্রাফিক আইন, আর এতেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। সিগন্যাল অমান্য করা আর উল্টো পথে গাড়ি চালানো ভিআইপিদের জন্য নতুন কিছু নয়, প্রতিনিয়তই এটা করছেন তারা।

সড়কে চলাচলে ভিআইপিদের অতিরিক্ত সুবিধা নেওয়ার কারণে ভুত্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ আর নিরুপায় থাকতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের।

শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমন চিত্রই দেখা গেছে রাজধানীর বিজয় সরণি ট্রাফিক পয়েন্টে।

সকাল থেকেই পড়ছে বৃষ্টি। বিজয় সরণি মোড় এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে যানবাহন। ছুটির দিন তাই খুব একটা চাপ নেই সড়কে। গণপরিবহনের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটাই কম, তবে সড়কে আছে প্রাইভেটকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা আর মোটরসাইকেল। সড়কের ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ট্রাফিক পুলিশের পাঁচ সদস্য। বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তারা।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, বিজয় সরণি মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট মো. সফিউল্লাহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র তল্লাশি করছেন। ফার্মগেট থেকে আসা একটি ধূসর রঙের সিএনজি চারিত অটোরিকশার ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ উত্তীর্ণ থাকায় একটি মামলা দেন তিনি। এরপর একটি মোটরসাইকেল চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় তাকেও মামলা দেন।

ঘড়ির কাটা ১১টা ৩০মিনিট। বিজয় সরণি-তেজঁগাও ফ্লাইওভারের মুখে একটি কালো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন’। ফার্মগেট থেকে উল্টো পথে আসা একটি প্রোবক্স প্রাইভেটকার ফ্লাইওভারের সেই সাইনবোর্ডের সামনে দাঁড়ায়। তা দেখে সার্জেন্ট দ্রুত দৌড়ে গাড়িটির কাছে যেতেই চালক সার্জেন্টকে দেখে ভয়ে গাড়িটি চালিয়ে পালান।

এমন সময় একটি সাদা পাজেরো জিপ ফ্লাইওভারের উল্টো পথে এসে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ায়। গাড়িটি ছিলো এক পুলিশ কর্মকর্তার। সার্জেন্ট সফিউল্লাহ ওই গাড়িটির চালককে উল্টো পথে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে চালক বলেন, ‘এটা স্যারের গাড়ি’। সার্জেন্ট পুলিশ আবার প্রশ্ন করেন, ‘কোন স্যার, স্যারের নাম কী?’ উত্তরে চালক বলে, ‘জয়েন্ট কমিশনার স্যারের’। আবার সার্জেন্ট জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্যারের নাম কী?’ চালক বলেন, ‘আমি জানি না’। চালক উল্টো বলেন, ‘ভেতরে তার মেয়ে বসা রয়েছে’।

গাড়ির ভেতরে বসা মেয়েটির কাছে ‘কথিত’ ওই স্যারের নাম জানতে চাইলে তিনি কিছুই বলেননি। পুলিশ ওই গাড়িটিকে পেছনে যেতে বললেও চালক কথা না শুনে সিগন্যাল ভঙ্গ করেই সামনে চলে যান।

এদিকে তখনই জাহাঙ্গীর গেট থেকে ফার্মগেটের দিয়ে যাওয়ার পথে বিজয় সরণি মোড়ে যান চলাচলে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পুলিশ বক্সে ডিউটিরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. সফিউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, চালক বলেছে, গাড়িটি পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার স্যারের। স্যারের নাম কী সেটা বলতে পারেননি। ভেতরে এক মেয়ে বসেছিলো তিনি কোনো কথা বলেননি।    

ভিআইপিরাই ট্রাফিক সিগন্যাল বেশি অমান্য করে, উপরের চাপ থাকায় এ ক্ষেত্রে পুলিশের কিছু করার থাকে না- অভিযোগের সুরে বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক সদস্য।   এ কারণে সড়কে ট্রাফিক সিগন্যালের দায়িত্বে থাকা পুলিশের সদস্যরা নিরুপায় হয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিজয় সরণি মোড়ে সিগন্যালে থেমে থাকা গাড়িগুলো থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা তুলছে নকল হিজড়ারা। টাকা না দিলে বিভিন্ন গালমন্দ করে, কখনও কখনও চালক বা যাত্রীর গায়ে হাত দেয়, কাপড় টেনে ধরে।

ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মো. বাতেন বাংলানিউজকে জানান, হিজড়াদের কিছু বললেই ওরা কাপড় খুলে তামাশা করে, আর গালাগালি করে। তখন আমরা নিরুপায় হয়ে যাই।

সিগন্যালে থেমে থাকা পিকাপ চালক রফিকুল বলেন, প্রতিনিয়ত ওরা এভাবে টাকা তুলছে। বিরক্ত লাগলেও ইজ্জতের ভয়ে দিতে হয়।  

এ বিষয়ে সার্জেন্ট সফিউল বলেন, আমরা ট্রাফিকের দায়িত্বে আছি। সড়কে হিজড়াদের বেশি উৎপাত দেখা দিলে থানার পুলিশকে জানাই, তারা এসে ব্যবস্থা নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
এসজেএ/আরআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।