রাজশাহী: বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বেসরকারি খাতে স্থাপিত সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংযোগকারী শাখা ও প্রতিনিধি কার্যালয় নিবন্ধনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এটি।
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পরিচালক নেই বিডা রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান কার্যালয়ে। ফলে কচ্ছপগতিতে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কাজ। এতে চরম হয়রানি ও দুর্ভোগে পড়ছেন বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।
মহানগরীর কাজিহাটার কার্যালয়টিতে গিয়ে সিনিয়র ইনভেস্টমেন্ট অ্যাসিসট্যান্ট ছাড়া কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তিনজন আউট সোর্সিং কর্মকর্তা, একজন প্রমোশনাল কর্মকর্তা এবং অফিস সহকারী অনুপস্থিত। অফিস প্রধান বিভাগীয় পরিচালক না থাকায় অন্য কর্মচারীরাও ইচ্ছমতো অফিস করেন। কখনও আসেন, কখনও আসেন না। এলেও গল্প-আড্ডায় অলস সময় পার করেন তারা।
রাজশাহী ও রংপুরের ১৬ জেলার সব কাজই পরিচালনা করা হয় এ কার্যালয় থেকে। ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন জেলা থেকে কাজের জন্য এসেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। একটি কাজের অনুমোদনের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
বগুড়ার সকাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তিনি একজন স্প্রিংপাতি আমদানিকারক। কোনো কিছু বাইরে থেকে আমদানি করতে হলে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর অনুমতিপত্র পেলে তারপরই বিদেশ থেকে মালামাল আমদানি করা যায়। কিন্তু গত তিন মাস ধরেই তিনি এখানে অনুমতিপত্রের জন্য ধরনা দিচ্ছেন।
প্রথম মাসে বলা হচ্ছিল, আজই কাগজ স্বাক্ষরের জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। আর দু’মাস ধরে বলা হচ্ছে, কাগজ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু স্বাক্ষর হয়ে আসেনি। সিনিয়র ইনভেস্টমেন্ট অ্যাসিসট্যান্ট এবি সিদ্দিক একাই গোটা অফিসের কাজ দেখেন। কিন্তু কোনো কাজই ঠিকমতো করে দেন না।
আগের পরিচালক শামসুল আলম গত ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত হয়ে চলে যান। গত ২৩ অক্টোবর যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেনকে বিডা’র রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়। তিনি ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বসেই এ কার্যালয়ের সব কাজকর্ম পরিচালনা করেন।
তাই কার্যালয়ের বিভিন্ন কাজের সব কাগজপত্র তৈরি করার পর তা ঢাকায় নিয়েই স্বাক্ষর করিয়ে আনতে হয়। তার স্বাক্ষর ছাড়া কোনো কিছুরই অনুমোদন হয় না। এমনকি এ কার্যালয়ের বেতন-ভাতা উত্তোলনের জন্যও তার স্বাক্ষর লাগে। ফলে গত অক্টোবরে আগের দু’মাসের বেতন একসঙ্গে তুলতে হয়েছে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
বিভিন্ন আবেদনের অনুমোদন না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারক, নতুন শিল্প উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।
এ ব্যাপারে এবি সিদ্দিকী কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তার কিছু বলার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে- বেসরকারি বিনিয়োগে শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা, শিল্প প্রকল্পগুলোর নিবন্ধন, শিল্প-কারখানার জন্য যথাযথ অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি, পণ্য আমদানি-রফতানির অনুমতি দান, বিদেশি শ্রমিকদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় কিংবা স্থাপনাগুলোতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির সংযোগ, পয়ঃপ্রণালী, টেলিযোগাযোগ সুবিধা সৃষ্টি, আমদানিকৃত সরঞ্জাম, খুচরা যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের জন্য শুল্ক বিভাগীয় ছাড়পত্র সংগ্রহ এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র সংগ্রহে সাহায্য করে বিডা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
এসএস/ওএইচ/এএসআর