ঢাকা: ৫৩, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা ১২১২। এ ঠিকানায় বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স একাডেমি ভবন ও রিলায়েন্স মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড।
এছাড়া চারপাশে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস। রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একটু দূরেই জাতীয় বক্ষব্যধি হাসপাতাল। সব মিলে তিন বেলা হোটেলে খাওয়ার মতো মানুষের অভাব হওয়ার কথা নয় এ জায়গাটিতে।
বিশেষ করে স্বল্প আয়ের যেসব মানুষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা কম খরচে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাস্তা বা রাতের খাবার খেতে চান- তাদের টার্গেট করে অনায়াসে চালানো যায় বিস্তৃত পরিসরের একটা সাশ্রয়ী হোটেল।
হয়তো এই বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স একাডেমি ভবন ও রিলায়েন্স মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেডের ঠিক সামনে খোলা জায়গায় দেওয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী একটি হোটেল। ছেড়া পলিথিনে প্যাঁচানো এবং ইট, কাঠ ও পাথরে চাপা দেওয়া টিনের ছাউনির নিচে প্রায় আলো-বাতাসহীন পরিবেশে এক সঙ্গে বসে ২০ থেকে ৩০ জন লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা।
এ অস্থায়ী হোটেলটির পেছন দিকে কোনো জানালা নেই। সামনের টিনের বেড়া কেটে সামান্য যে জায়গা ফাঁক করা হয়েছে, সেটি দিয়ে মূলত ফুটপাতে রান্না করা খাবার হোটেলে ঢোকানো হয়।
অন্য হোটেলের রান্নাঘর পেছনে থাকায় কোথায় কী রান্না হয় সেটি কাস্টমারের চোখে পড়ে না। রান্নাঘরের পরিবেশ না দেখেই মনের আনন্দে খেয়ে যান তারা।
কিন্তু মহাখালীর এই ফুটপাতের হোটেলটির রান্না করা খাবার প্রথমে ফুটপাতে এনে জড়ো করা হয়। সেখান থেকেই পরিবেশনের জন্য খাবার নেওয়া হয় হোটেলের ভেতরে।
হোটেলের সামনে রাখা বহুদিনের পুরনো পানির ড্রাম, রান্নার কড়াই, পাতিল, ভাতের পানি ঝরানোর জন্য প্লাস্টিকের ঝুড়ি, ছিদ্র করা সিলভারের বড় ডিশ ও প্লেট-বাটি ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত নোংরা জারের উপর মাছি ভিন ভিন করছে।
হোটেলের ভেতরে পরিবেশন করা খাবার প্লেট ও রুটি-পরোটা বানানোর জন্য ছেনে রাখা আটা-ময়দার দলাতেও ভন ভন করছে মাছি। এই ভন ভন করা মাছির মধ্যে দিব্যি দুপুরের খাবার খাচ্ছেন ২০ থেকে ৩০ জন লোক।
তারা সবাই যে ফুটপাতের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ, তা নন। চারপাশের অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরাও এখানেই খান নিয়মিত। ধারের কাছে ভালো হোটেল থাকলেও আকাশছোঁয়া দামের কারণে সেদিকে না গিয়ে অস্থায়ী এই হোটেলে খেতে হয় তাদের।
বিশেষ করে রিলায়েন্স মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড ও জাতীয় বক্ষব্যধি হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা স্বজনরা এই হোটেল খাবার খান। কাছাকাছি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এখানে খেতে আসেন।
অবশ্য এই হোটেলের আশপাশে থাকা ছোট ছোট বক্স হোটেলেও প্রচণ্ড ভিড় লেগে থাকে সবসময়। নুডুলস, ডুডুলস, স্যান্ডউইচ, ডিম-পরোটা, জুস, মিল্কশেক- সবকিছুই মেলে এখানে। তবে যা কিছুই খান না কেন, মাছির সঙ্গে শেয়ার করতেই হবে।
খোলা পরিবেশে তৈরি খাবারে ধূলা-বালি তো রয়েছেই। খাবার তৈরি ও পরিবেশনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বড় বড় নখ, তৈলাক্ত লুঙ্গি-গামছা, শরীর থেকে ঝরে পড়া ঘামবিন্দু- সবকিছুতেই থাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তারপরও নিতান্ত নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এ ধরনের ফুটপাতের হোটেল ও দোকানের খাবার খেতে হচ্ছে রোজ।
এসব হোটেলে খেতে আসা কাস্টমারদের অভিমত, বড় বড় হোটেলের খাবারের চেয়ে এসব ফুটপাতের হোটেলের সবজি, ভর্তা, ডাল, ছোট মাছ অনেক সুস্বাদু। দামও কম। তাই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই এখানে খেতে আসে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে হোটেল মালিকরা যদি আরেকটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করেন, তাহলে সব পক্ষের জন্যই ভালো হয়।
কথা হয় রিলায়েন্স মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড’র কর্মচারী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাতের কাছে এবং কম দাম হওয়ায় দুপুরের খাবার এখানেই খাই। কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সেভাবে ভেবে দেখিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
এজেড/এসএনএস