ময়মনসিংহ: নিরাপদ ‘ডেটিং কুঞ্জ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল উদ্যান। ব্রহ্মপুত্র নদের উপকণ্ঠে শত বছরের প্রাচীন এই সাহেব কোয়ার্টার পার্কে প্রেমিক জুটির অন্তরঙ্গ সময় কাটানোও ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা।
পার্কের ফুলের বাগান, বসার পাকা বেঞ্চসহ এখানে-সেখানে দলে দলে তরুণ-তরুণীরা নিশ্চিন্তে হাতে হাত রেখে সময় কাটানোর মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে অবাধে অসামাজিকতা ও অশ্লীলতার পথ বেছে নেয়ায়, বিষিয়ে উঠেছিলেন সাধারণ দর্শনার্থীরা। তবে প্রকাশ্য অসামাজিকতার এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদও করতো না কেউই।
ফলে প্রতিনিয়তই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল আনন্দের পরশ পেতে এ উদ্যানে আসা মানুষজনকে।
এ পরিস্থিতির অবসানে উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। সামাজিক অবক্ষয় রোধে, সুস্থ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কোলাহলমুক্ত ও সবুজে ঘেরা এ পার্কে প্রেমিক জুটি নামধারী এসব তরুণ তরুণীদের কর্মকাণ্ডে অবশেষে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ।
শুধু তাই নয়, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে নিয়মিতই উদ্যানে আসা কাঁধে ব্যাগ আর ড্রেস পরিহিত শিক্ষার্থীদের সময় না কাটাতেও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের নির্দেশে মহিলা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রোববার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর নাগাদ উদ্যান ঘুরে ঘুরে তাদের সঙ্গে কথা বলেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম।
প্রথমে তাদের সতর্ক করে দেয়ার পাশাপাশি ডেটিংয়ের উদ্দেশ্যে উদ্যানে আর না আসতে বলা হচ্ছে। এরপরও আপত্তিকর অবস্থায় অবাধ বিচরণ বন্ধ না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ ছোঁয়া শত বছরের প্রাচীন সাহেব কোয়ার্টার পার্কে সম্প্রতি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে ঢেলে সাজানো এ পার্কটিকে নামকরণ করা হয় ‘জয়নুল উদ্যান’।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা ও বৈশাখী মঞ্চ এ পার্কের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ সংলগ্ন পার্কটিতে প্রতিনিয়তই অনেকেই সপরিবারে ঘুরতে আসেন।
ছুটির দিনে বিনোদন পিয়াসী মানুষের স্রোত ছড়িয়ে পড়ে পার্কের ওপারের চরেও। পার্কের ভেতরের স্টিলের পাইপের সীমানা প্রাচীর, পাকা স্ল্যাবের হাঁটার পথ, ফুলের বাগান আর পরিবেশ দৃষ্টিনন্দন।
ইট-পাথরের ব্যস্ত শহুরে জীবনে ব্রহ্মপুত্র নদছোঁয়া এ সবুজ উদ্যান নগরবাসীর ফুসফুসের কাজ করে।
তবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে নগরীর স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এ উদ্যানে নির্বিঘ্নে ডেটিং করতে আসে। স্কুল-কলেজের সময় শেষ হবার আগ পর্যন্ত এখানেই নীরবে-নিভৃতে সময় কাটায় তারা।
ফলে এ পার্কের নামের শেষে জুটেছে ‘প্রেমকেন্দ্রে’র তকমা। প্রেমিক যুগলদের এ অভয়ারণ্যে এসে যারপরেনাই বিব্রত হচ্ছেন সাধারণ দর্শনার্থীরা।
বিষয়টি অনুধাবন করেই প্রেমের নামে অশ্লীলতায় মেতে ওঠা তরুণ-তরুণীদের পার্কে প্রবেশ ঠেকাতে এবং আধুনিকতার নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। পার্কে সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নিবিড় মনিটরিংও করছে পুলিশ। পুলিশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পার্কে আসা সাধারণ দর্শনার্থীরা।
জয়নুল উদ্যানে বেড়াতে আসা অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যালয় শিক্ষক সোহরাব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ উদ্যানে স্কুল-কলেজের ড্রেস পড়া তরুণ-তরুণীরা মূল্যবোধ ধ্বংসকারী অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নীরব প্রদর্শনী চালিয়ে যাচ্ছিল।
এ কারণে অনেকেই পরিবার নিয়ে পার্কে আসাই ছেড়ে দিচ্ছিলেন। প্রেমের নামে এমন অশ্লীলতা বন্ধে জেলা পুলিশের কার্যকরী এ উদ্যোগ ইতিবাচক এবং প্রশংসার দাবিদার।
লাগামহীন অশ্লীলতা তরুণ প্রজন্মকে চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ পালিয়ে জয়নুল উদ্যানে ডেটিং করে তরুণ-তরুণীরা। আমরা তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি এখানে কোন অসামাজিক কার্যকলাপ চলবে না। এ কারণে প্রতিদিনই পার্কে পুলিশি টহল ও কড়া নজরদারি থাকবে।
জনসচেতনতামূলক এ অভিযানের পরেও শিক্ষার্থীরা ডেটিংয়ের নামে অসামাজিকতা চালিয়ে গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
এমএএএম/আরআই