ঢাকা: ‘সকাল থেকেই কাজ করছি, রাতে রেস্টুরেন্টের প্রতিটি সিঁড়ি ও ফ্লোরে লেগে থাকা ছোপ রক্তের দাগ ও ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। এখনো কাজ চলছে, রেস্টুরেন্ট ওয়ারিং, দরজা, জানালা মেরামত ও নতুন ফার্নিচার আনা হচ্ছে, ভিতরে প্রায় ৫০ জনের মত কাজ করছে।
সোমবার (নভেম্বর ১৪) গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির সামনে দাঁড়িয়ে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন কর্মচারী আরমান ও শিপন।
আরমান ও শিপন বাংলানিউজকে বলেন, বেকারিটি আবারো চালু করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ভিতরে ৫০ জনের মতো কর্মচারী কাজ করছে। ধোয়া, মোছা ও মেরামতের কাজ চলছে।
আরমানের বাড়ি নোয়াখালী এবং শিপনের বাড়ি কুমিল্লায়। তার প্রায় দেড় বছর ধরে এই বেকারিতে কাজ করতেন তারা। হামলার দিন তারা দু’জন ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন।
ওই দুই কর্মচারী আরো জানায়, বেকারির ম্যানেজার সোমবার সকাল থেকেই ভিতরে কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। বিলকিস নামে একজন নারী এই বেকারির মালিক। তিনি দেশের বাইরে থাকেন।
সোমবার সকাল ১০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিন গুলশানের-২ গোলচত্বর থেকে হলি আর্টিজান বেকারির সামনে গিয়ে দেখা যায়, গুলশান-২ গোল চত্বরের আগে মূল সড়কে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট।
এছাড়া গুলশান -২ এর প্রবেশপথ, থানার সামনে ও গুলশান-২ এর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন ৠাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ডিপ্লোম্যাটিক ফোর্স।
হলি আর্টিজানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বেকারির মূল প্রবেশপথে পুলিশের ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন বেশ কিছু পুলিশ সদস্য। ভিতরে মিডিয়া কর্মীদের ঢুকতে বা ছবি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। বেকারির ভেতরে মেরামত কাজ করার জন্য নেওয়া হচ্ছে মালামাল। এছাড়া কর্মচারীরা যাতায়াত করছেন।
হলি আর্টিজানের পাশে ফ্লোরিয়া বাড়িতে কেয়ারটেকারের কাজ করেন সেলিম রেজা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রোববার সকাল থেকেই বেকারিতে ধোয়া, মোছা ও মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত কাজের জন্য সোমবার সকাল ট্রাকে করে বিভিন্ন জিনিসপত্র নেওয়া হয়েছে।
হলি আর্টিজানের সামনে দায়িত্বরত ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্য ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমরা সদা তৎপর। নিরাপত্তার জন্য গুলশানের-২ এর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রায় ১৩টির মত পুলিশি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতে এটি আগেও ছিল এখনো আরো জোরদার করা হয়েছে।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার প্রায় সাড়ে চার মাস পর গত রোববার বিকেল ৪টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন আহমেদ বেকারির মালিক শাহাদাত হোসেনকে মামলামালসহ বাড়িটি বুঝিয়ে দেন। গত জুলাইয়ে হামলার পর থেকেই বাড়িটি পুলিশের হেফাজতে ছিল। সাধারণের প্রবেশও নিষিদ্ধ ছিল।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী সোমবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, তদন্তের স্বার্থে বেকারিটি আমরা পুলিশের হেফাজতে রেখেছিলাম। রোববার দুপুরে মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হস্তান্তর প্রক্রিয়ার পর আমাদের দায়িত্ব শেষ। এখন যে কোনো দিন মালিক এটি পুনরায় চালু করতে পারবেন।
গত ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানের রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে সন্ত্রাসীরা। সেখানে উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
হামলার প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ২ জুলাই সকালে রেস্তোরাঁয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে যৌথ বাহিনী। এরপর সেখান থেকে ২৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ইতালীয় নয়জন, সাতজন জাপানি, তিনজন বাংলাদেশি এবং ভারতীয় একজন ছিলেন। বাকি ছয়জন হামলাকারী বলে জানায় সেনাবাহিনী।
এই ঘটনায় নিহত জঙ্গিরা হলেন মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও সফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
আরএটি/আরআই