ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পতাকা বিক্রি করতে রাজশাহী ফরিদপুরের আনোয়ার

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৬
পতাকা বিক্রি করতে রাজশাহী ফরিদপুরের আনোয়ার ছবি: বাংলানিউজ

জাতীয় পতাকা বিক্রির উদ্দেশ্যে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর দড়িখরবোনা রেলক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ছিপছিপে গড়নের এক যুবক। উত্তরের হিমবাতাসে পতপত করে উড়ছিল বাঁশের সঙ্গে বেঁধে রাখা ৪/৫টি পতাকা।

রাজশাহী: জাতীয় পতাকা বিক্রির উদ্দেশ্যে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর দড়িখরবোনা রেলক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ছিপছিপে গড়নের এক যুবক। উত্তরের হিমবাতাসে পতপত করে উড়ছিল বাঁশের সঙ্গে বেঁধে রাখা ৪/৫টি পতাকা।

চোখের পলক ফেলতেই অনুভূত হলো, লাখো শহীদের রক্তঝরা বিজয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। আর মাত্র চারদিন পরই ১৬ ডিসেম্বর।  

ব্যস্ত জীবনে চলার পথেই যেনো মিললো বিজয় দিবসের শিহরণ। বোঝা গেলো, রক্ত দিয়ে কেনা লাল সবুজের পতাকা দেখে এভাবেই হয়তো অনেক পথিকের মনে বিজয় আনন্দের ঝড় বয়ে যায়। আর সেই অনুভূতিতেই পথের মাঝে দাঁড়িয়ে পতাকা কেনেন অনেকে। কেউ আবার দাঁড়িয়ে থেকে উড়ন্ত পতাকার দিকে তাকিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ খোঁজেন।  

ভাবনাটি অনেকাংশেই মিলে গেলো মৌসুমী পতাকা বিক্রেতা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলে। তার ভাষ্যমতে, শূন্যে পতাকা উড়তে দেখে অনেকের মনই উতলা হয়ে ওঠে। বিজয় দিবসের আনন্দে তাই অনেকে সেই পতাকা কিনে বাড়ির ছাদ, বেলকনি, গাড়ি, রিকশা ও মোটারসাইকেলের সামনে ওড়াতে চান। এই সুবাদে তার মতো মৌসুমী পতাকা বিক্রেতাদের বাড়তি উপার্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় লাল-সবুজের পতাকা।  

সবার মনে পতাকা কিনে ওড়ানোর সাধ জাগাতে তাই ব্যাগে নয়, বাঁশের মধ্যে বেঁধে তা ফেরি করা হয়। তারা দূর-দূরান্ত থেকেও আসেন বলে জানান আনোয়ার।   
বাড়ি কোথায় প্রশ্ন করতেই আনোয়ার বলেন, তিনি এই জেলার অধিবাসী নন। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। তিনি ভাঙ্গা থানার ঝুমারকান্দা গ্রামে শেখ রজব আলীর ছেলে। তবে অন্য কোনো কারণে নয়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেবল জাতীয় পতাকা বিক্রি করতেই উত্তরের শহর রাজশাহীতে এসেছেন ফরিদপুরের এই অধিবাসী। পেশায় কৃষক।

আনোয়ার হোসেন জানালেন, তিনি একা নন। তার সঙ্গে গ্রাম থেকে আরও ১৫ জন কৃষক এখন রাজশাহীতে। সবাই জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন। সারাদিন বিভিন্ন এলাকায় ভাগ হয়ে পতাকা বিক্রি করেন। রাতে এক জায়গায় মিলিত হন। মহানগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকার একটি মেস ভাড়া নিয়ে সবাই একত্রেই থাকেন। এতে শক্তি ও সাহস পান তারা।

বিজয়ের মাসের প্রথম সপ্তাহে আসেন। আর বিজয় দিবসের পরদিন চলে যান। প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১৫শ টাকার পতাকা বিক্রি করেন একেকজন। তবে কেবল পতাকাই নয় ‘বিজয় দিবস’ লেখা রাবার ব্যান্ড, হ্যান্ড ফ্লাগও বিক্রি করেন। সঙ্গে পতাকার ছাপ দেওয়া স্টিকারও থাকে। এতে প্রায় দ্বিগুণ লাভ থাকে বলেও জানান আনোয়ার হোসেন।

দরদাম সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন জানান, ফুট হিসাবে পতাকা বিক্রি করেন তারা। ছয় ফুটের পতাকা ১শ ২০ থেকে ১শ ৫০ টাকা, পাঁচ ফুটের পতাকা ৮০ থেকে ১শ টাকা, চার ফুটের পতাকা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এভাবে সর্বনিম্ন দুই ফুট উঁচ্চতার পতাকা বিক্রি করা হয়। এছাড়া ১০ থেকে ২০ টাকার মধ্যে বিজয় দিবস লেখা রাবার ব্যান্ড, হ্যান্ড ফ্লাগ ও স্টিকার রয়েছে। তবে বিজয় দিবসের দিন ও সময়ভেদে দামের হেরফের হয় বরাবরই।

কারণ বলতে গিয়ে আনোয়ার হেসেন বলেন, পতাকার দাম নির্ধারণ যায় আসে না। মূলত যার কাছে যেমন পাওয়া যায়, তার কাছে তেমন নেওয়া হয়। কেউ কম দেন আবার কেউ আবেগের বসে দামের চেয়েও বেশি দিয়ে দেন।

পতাকা তৈরি নিয়মের জটিল প্রশ্নে আনোয়ারের সাবলীল উত্তর, ভাই নিয়ম জানলে কী আর পতাকা বিক্রি করতাম!

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এসএস/এসএনএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।