কখনো আবার বান্দরবানের নাফাখুম, অমিয়াখুমের মতো পাথরের ভাঁজ। পানি গলছে সেখানে দিয়ে।
সদিচ্ছা, দেশের জন্য কিছু করার মানসিকতা, শহরকে বদলে দেওয়ার সুচিন্তা, সুপরিকল্পনা, নিজের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার সৎ সাহস থাকলে যে কোনো কাজই অসম্ভব নয় সেটা করে দেখাচ্ছেন একজন আবেদ। পুরো নাম মো. আবেদ মনসুর। ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও তিনি।
সময়ানুবর্তিতা, পরিশ্রমের মানসিকতা, একাগ্রতা, ভালো কিছু করা, নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জিদ যাকে ৯০ কোটি টাকা ব্যয় করে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বনানী-এয়ারপোর্ট সড়ক আমূল বদলে দেওয়ার সাহস যুগিয়েছে।
পাথুরে বনের মতো এমন সুন্দর সব পরিকল্পনায় সাজছে বনানী-এয়ারপোর্টের ছয় কিলোমিটার সড়ক। কাজ চলছে সড়কের দুপাশেই। চমকের শেষ নেই এ সৌন্দর্যবর্ধন কাজের। কেবল দু’একটি অংশ দৃশ্যমান হওয়া শুরু হয়েছে। কালশী থেকে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের যে শাখা এসে নেমেছে এয়ারপোর্ট রোডে, এর পাশের কিছু অংশের কাজ কেবল সম্পন্ন। তবে কিছু গাছ আরও বড় হলে পরিবর্তন আসবে আরও কিছু। ঢাকাবাসীর সজুব ঢাকা দেখার ইচ্ছেটা এভাবেই বাস্তবায়ন হওয়া শুরু হয়েছে একজন মানুষের প্রচেষ্টায়। প্রতিষ্ঠানটির কাজের তত্ত্বাবধান করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
কুর্মিটোলা, ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন, নিকুঞ্জ, বিশ্বরোড সড়কের পাশে যে অগোছালো জঙ্গল ছিল সেটা এখন অদৃশ্য। সেখানে দৃশ্যমান হচ্ছে সুন্দর সাজানো অক্সিজেনদায়ী বাগান। নিজে প্রতিদিন ভোরে এসে দেশি শ্রমিক ও চীনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে থাকেন আবেদ। ফুটপাত ধরে হেঁটে সৌন্দর্যবর্ধন পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়িত, অর্ধবাস্তবায়িত কাজ দেখাচ্ছিলেন তিনি।
পাথুরে বনের মতো ফোয়ারা হবে ১২টি। বাগান ছাড়াও চমকের শেষ নেই। সড়কজুড়ে বসে গেছে দর্শনীয় সড়কবাতি। জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হচ্ছে ভাস্কর্য। সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে থাকছে আলাদা জোন। সেখানে ফুল-গাছঘেরা সবুজ ঘাসের বুকে থাকবে বীরশ্রেষ্ঠদের মার্বেল পাথরে খোদাই করা ভাস্কর্য।
অক্সিজেন ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য চীন থেকে আসছে ২ হাজার ২৫ থেকে ৪০ ফুটের বনসাই। যেগুলোর বয়স শত বছর। বারোমাস যেন সড়কের দুপাশে ফুল থাকে, সে বিবেচনায় করা হচ্ছে বাগান। ঢাকা শহরে জগিং করার জায়গার বড় অভাব। সে অভাবও দূর করবে এ সড়কের ফুটপাত। আবেদের পরিকল্পনা সেরকমই। বসার জন্য থাকছে কংক্রিটের বেঞ্চ। সামনে ডিজিটাল ডাস্টবিন। সড়কে যেন ময়লা না থাকে সেজন্য আনছেন সাকার মেশিন। বাগানেও এমনভাবে ঘাস ও গাছ লাগানো হচ্ছে যেন ধুলো না তৈরি হয় কিংবা ওড়ে।
সড়কের দুপাশে নির্মিত হচ্ছে ১২টি ভিন্ন ডিজাইনের ডিজিটাল ওয়েটিং রুম। এতে থাকছে ৮০ থেকে ৪শ জন একসঙ্গে বসার ব্যবস্থা। সঙ্গে ফ্রি মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট, ফ্রি নিরাপদ পানি, মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং রুম, এটিএম বুথ, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, ডিজিটাল স্ক্রিন, উন্নতমানের ওয়াশরুম, কয়েন বা টাকা ফেলে কারও সাহায্য ছাড়া কোনো পণ্য কেনার সুযোগ। পুরো জোন থাকবে ওয়াইফাই।
নিকুঞ্জ এলাকায় হবে শিশুদের জন্য কিডস জোন। সেখানে একসঙ্গে দেড় হাজার মানুষ সময় কাটাতে পারবে। দুর্গন্ধ, দূষিত লেকটিও নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হয়ে যাচ্ছে।
এ প্রকল্প পুরোপুরি শেষ হবে জুন মাসে। মার্চে অনেকটাই থাকবে দৃশ্যমান। ১০ বছর মেনটেইন করবে ভিনাইল গ্রুপই। সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে কাজ করবেন ৮০ জন কর্মী। নিরাপত্তার দিকটিও থাকবে অন্যতম বিবেচনায়।
কেন নিজের অর্থ ব্যয় করে এ কাজ? জবাবে সফল এ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বলেন, এ সড়ককে বলা যায় বাংলাদেশের গেটওয়ে। বিদেশিদের এদেশে পা দিয়ে প্রথম ইম্প্রেশনটা যেন ভালো হয়। দেশ সম্পর্কে তারা যেন ভালো ধারণা পায়। বলতে পারেন এখন সামর্থ্য আছে, নিজের তাগিদ, দেশের জন্য দায়বদ্ধতা থেকেই এটা আমি করছি।
সুযোগ পেলে শুধু ঢাকা শহর নয়, পুরো দেশ বদলে দিতে চাই। যদি কোনোদিন কয়েক বছরের জন্য হলেও জনপ্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাই তাহলে দেখিয়ে দিতে চাই কাজ, উন্নয়ন কীভাবে করতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৭
এএ