তাদের প্রশ্ন, রাস্তা যখন কাটাই হবে তাহলে মাঝখানে রাস্তা ঠিক করে সরকারের টাকা নষ্ট করা হলো কেনো? তারা কী ভালো রাস্তা কাটার জন্যই কোদাল নিয়ে বসে থাকে?
সরেজমিনে কথা হয় সার্কুলার রোডের বাসিন্দা আজমী নূরের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার যে অবস্থা তাতে আমি হতবাক, আমাদের বলার কিছুই নেই।
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও রাস্তাটা খারাপ ছিল। তখন তারা এসব করলো না! রাস্তা ভালো করার পর আবার কাটতে হলো। আসলে বাংলাদেশে কোনো কিছু ঠিকঠাক আছে? কোনো কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়? কী ছিল সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ায়? তারা আজ কোথায়? তাছাড়া শ্রীলঙ্কাও তো আমাদের থেকে অনুন্নত। সেখানেও এই ধরনের কোনো ভোগান্তি নেই। কারণ তারা সব পরিকল্পনা অনুযায়ী করে থাকে। আর আমরা শুধু নিচের দিকে যাচ্ছি। ’
জনগণের ভোগান্তির কথা কেউ চিন্তা করে না। এমপি-মন্ত্রীরা যখন এখান দিয়ে যান, তখন আধা ঘণ্টা আগে থেকে রাস্তা ফাঁকা থাকে। তাই তাদের এসব ভোগান্তি চোখে পড়ে না। যোগ করেন আজমী।
মুদি দোকানি আব্দুস সালাম বলেন, আজকে (শুক্রবার) আসছেন কেনো? যেদিন অফিস খোলা থাকে, সেদিন আসলে নাগরিকদের ভোগান্তির আসল চিত্র দেখতে পারতেন। কয়দিন আগেই রাস্তাটা ঠিক কইরা সরকারের টাকা নষ্ট করলো। রাস্তা যখন কাটবো তাইলে কয়েকদিনের জন্য ঠিক করার কী দরকার ছিল।
রাস্তা কাটার ফলে অনেক জায়গায় পানিও জমেছে। আর সেখানে রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্ত হয়েছে। গর্তে প্রায়ই রিকশা থেকে পড়ে অনেকের হাত-পা’ও ভেঙেছে। এগুলো কবে ঠিক হবে তা কে জানে।
এলাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই যে- দেখেন রাস্তার পাশে ময়লা জমে আছে। রাস্তা কাটার ফলে ময়লার গাড়ি ঢুকতে পারছে না। তাই ৪/৫ দিন ধরে এই ময়লা নিতেও পারছে না। গাড়িতে তো জ্যাম লাইগাই থাকে। হাইটাও যে যাইবেন কেমনে যাইবেন, এসব দুর্গন্ধ ময়লার পাশ দিয়ে এইডা আমারে কন।
জন দুর্ভোগ মানে? কার দুর্ভোগ কে দেখে? এসব বলে কোনো লাভ হবে না। কেউ কি আমাদের কথা শুনবে? সবার অসুবিধা হচ্ছে এই রাস্তা কাটার জন্য, যোগ করেন তিনি।
মগবাজার এলাকায় ৪ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন মো. শিপন মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঠিক করা রাস্তাটাকে আবার নষ্ট করলো। এটা বেআইনি হচ্ছে। এতে সরকারের প্রচুর টাকা অপচয় হচ্ছে। আজকে (শুক্রবার) বন্ধের দিন তাও দেখেন রাস্তায় জ্যাম। এখান দিয়ে যারা অফিসে যায়, তাদের চোখের পানি পইড়ে যাবার অবস্থা হয়। একদিন অফিস চলাকালে আসেন দেখতে পাইবেন। ’
চায়ের দোকানদার মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি এই এলাকায় ২০ বছরের মতো আছি। ৫ বছর হবে এই দোকান করি। এর আগে এরকম দেখি নাই।
তিনি বলেন, কী আর করবেন। যার যখন কাজ করার সময় হয়, সে তখন কাজ করে। রাস্তা খারাপ ছিল একজন ভালো করছে। আর বিদ্যুতের লাইন ঠিক করা দরকার পড়ছে করতেছে। কাজ তো আর একজন করে না। সবাই ভালোর জন্যই করে। কিন্তু পরিকল্পনা কইরা করা দরকার। এই যে কারেন্টের লাইন লাগাইতেছে, এই রাস্তা আবারও কাটতে হবে, টিঅ্যান্ডটি লাইন করার সময় তাহলে বোঝেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের ৩ নম্বর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মু. নুরুজ্জামান শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমাদের কাজ নয়। এই কাজের সঙ্গে আমরা সংশ্লিষ্ট নই। এটা প্রজেক্টের কাজ। প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৭
এমএইচকে/পিসি