শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) হাজারীবাগে গেলে অধিকাংশ ট্যানারি মালিকরা বাংলানিউজকে এ কথা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে একাধিক ট্যানারি মালিক বলেন, সাভার ট্যানারির অধিকাংশ প্লটের জায়গা থেকে গেছে।
মালিকরা আরও জানান, সাভারে যখন ট্যানারির জায়গা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে তখন আমানুল্লাহ আমান বিএনপি’র শিল্পমন্ত্রী নিজামীকে নিয়ে দুর্নীতি করেছেন। আবার যখন জায়গা ভরাট হয়েছে তখন নাসিরউদ্দিন পিন্টুর যোগসাজশে অধিকাংশ বিএনপি সমর্থিত ট্যানারির মালিকরা বেশি করে জায়গা নিয়ে নিয়েছেন।
সাভার ট্যানারি নিয়ে যখন চুক্তিপত্র হয়েছে তখন বলা হয়েছে, হাজারীবাগ ট্যানারিতে একটি পানের দোকান থাকলে, সাভার ট্যানারিতে তার পানের দোকান থাকবে। এই মর্মে সবাইকে নিয়ে সই করানো হয়। কিন্তু হাজারীবাগে যে ট্যানারি রয়েছে সাভারে সেটা হয়নি। প্লট নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ অধিকাংশ ট্যানারি মালিকদের।
সাভার ট্যানারিতে প্লট না পাওয়া আরব ট্যানারি লিমিটেডের মালিক হাজী ইলিয়াছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্লট দিতে তদন্ত হয়েছে এবং বিসিক শিল্পমন্ত্রী প্লটও দিতে বলেছেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর ধরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু আমাকে প্লট দেবেন দেবেন করেও প্লট দিচ্ছেন না। এছাড়া ট্যানারি সম্পর্কে শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিসিকের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
তিনি আরও বলেন, সাভারে বড় বড় কয়েকটি ট্যানারির কাজ চালু করতে বেশ কয়েকমাস সময় লাগবে। কেননা সাভারে ট্যানারির পানি যাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই। যেখানে হাজারীবাগের ট্যানারিতে পানি যাওয়ার জন্য ড্রেনের গভীরতা হচ্ছে সাড়ে তিন ফুট, সেখানে সাভার ট্যানারিতে ড্রেনের গভীরতা মাত্র ১২ ইঞ্চি। ফলে সাভার ট্যানারিতে ১০ থেকে ২০টি ট্যানারির পানি ছেড়ে দিলেই সাভারের সব রাস্তাঘাট ডুবে যাবে। ফলে এই ড্রেনেজ ব্যবস্থা ট্যানারি মালিকদের নতুন সমস্যার সৃষ্টি করছে।
বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গ্যাসের ভালো ব্যবস্থাও নেই সাভার ট্যানারিতে। কেননা হাজারীবাগ ট্যানারিতে প্রত্যেকটি ট্যানারির মুখে মুখে গ্যাসের লাইন রয়েছে। ফলে যে কেউ সহজে গ্যাসের সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু সাভার ট্যানারিতে অনেক দূর থেকে গ্যাসের সংযোগ নিতে হবে। ফলে গ্যাসের লাইন নিতে গেলে যে অর্থ প্রয়োজন তা অধিকাংশ ট্যানারি মালিকদের নেই। শুধু তাই নয়, সব মেশিন চালু করার মতো বিদ্যুতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই সাভার ট্যানারিতে।
গোপন সূত্রে আরও জানা যায়, হাজারীবাগের ট্যানারি সরাতে বর্তমান সরকার ২শ ৫০ কোটি টাকা মালিকদের ক্ষতি পূরণ দিয়েছে। যে অর্থ সরাসরি দেওয়ার কথা ট্যানারি মালিকদের। সেটা আগেভাগে দেওয়া হয়েছে বিসিককে। আবার বিসিক বলছে, ট্যানারির মালিকরা যতো দ্রুত কাজ করবেন ততো দ্রুত টাকা দেওয়া হবে। অন্যথায় মালিকরা কোনো টাকা পাবেন না। ফলে এই অর্থে দুর্নীতি হয়েছে বলে মালিকদের অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা সাভারে দেড় হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছেন। তবে সাভারের কোনো প্লট এখনও হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের নামে লিখে দেওয়া হয়নি। ফলে ট্যানারি মালিকরা বর্তমানে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না।
এদিকে, বিদেশে বর্তমানে মাত্র ২০ শতাংশ চামড়া রফতানি হচ্ছে। এই ২০ শতাংশ চামড়া কিনছে চীন। এরমধ্যে কোরিয়া, তাইওয়ান,জাপান, ভিয়েতনাম, ইতালিসহ ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে কোনো চামড়া কিনছে না বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৭
এসজে/এসএনএস