ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শুধু উচ্ছেদই কি সঠিক সমাধান?

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
শুধু উচ্ছেদই কি সঠিক সমাধান? বিক্ষোভ মিছিলে হকাররা/ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: চলছে হকার উচ্ছেদ অভিযান। রাজধানীজুড়ে যানজট এবং পথচারীদের ভোগান্তি কমাতে অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। 

এরআগে বিভিন্নসময় উচ্ছেদ করলেও তার কার্যকারিতা দেখা যায়নি। তবে দিনের বেলায় ফুটপাতে হকার বসা বন্ধ করতে চলতি মাসে কঠোর অবস্থানে যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু সব সমস্যা কি কঠোর অবস্থানে গিয়ে সমাধান করা সম্ভব?

চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি থেকে গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ডিএসসিসি। এর পর থেকেই দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, মিছিল, বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। তাদের দাবি করছে পুনর্বাসন না করে তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না।

অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল থেকেই বিক্ষোভ মিছিলে নেমেছেন রাজধানীর হকাররা। সকাল ১১টা থেকে পল্টন মোড়ে ১০ দফা দাবি নিয়ে জড়ো হন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।

দাবিগুলো হলো- পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ না করা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া, পরিচয়পত্র দেওয়া, বাজেটের আওতায় আনা, ট্যাক্সের অন্তর্ভুক্তিকরণ, সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা, বেদখল জমি দখল করে হকারদের পুনর্বাসন, ৫ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা নেওয়া, চাঁদাবাজি ও নিপীড়ন বন্ধ করা।

এসময় গুলিস্তানের হকার রঞ্জুর বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বুঝি পাবলিকের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু দোকান না দিলে যে আমগো পেট চলে না। পেটে ক্ষুধা না থাকলে কি আর এমন করি। তাছাড়া ঘরে ৪টা বাচ্চা। তাদের লেখাপড়ার খরচও তো কম না।

সন্ধ্যা ৬টার পর হকাররা দোকান খুলতে পারবেন এবং শুক্রবার ও শনিবার তারা পুরো দিন দোকান করতে পারবেন- এ শর্তগুলোও দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ শর্তের ব্যাপারে ফুটপাত ব্যবসায়ী রফিক বলেন, ‘হেরা (সিটি করপোরেশন) যেমনে কয় আসলে কিন্তু এমন হয় না। সন্ধ্যার পর দোকান খুললে একটা কাপড় বেচতে পারিনা। গুলিস্তান থাইকা গাউছিড়া মার্কেটে যাইতে ভাড়া দেওয়া লাগে ৪শ থাইকা ৫শ টাকা। যা আমগো কাছে অনেক। আবার গাউছিয়া যাইয়া বসার জায়গাও পাই না। তাইলে আমরা যামু কই?’

বাংলাদেশ হকার ইউনিয়নের তথ্যমতে, দেশজুড়ে প্রায় কয়েক লাখ হকার রয়েছে। জীবন জীবিকার তাগিদে পরিবার, সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতেই ফটুপাতে ব্যবসা করেন তারা। এভাবে কঠোর অভিযানে বেকার হয়ে যাবেন তারা। সেই সঙ্গে দারিদ্রতা আর অর্থাভাবে পড়বে তাদের পরিবারও। সেক্ষেত্রে একটি সমস্যা সমাধানের জন্য কি আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে না?

যদি তাই হয়, তাহলে হকার এবং তাদের পরিবারের বিষয়টি মাথায় রেখেই সামনের পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিৎ। যেটা হবে মানবিকতা।

এসব দাবি নিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন হকার নেতারা। বৈঠকে তাদের দাবিও জানিয়েছেন। কিন্তু বৈঠক শেষে যুক্তি তর্কে না গিয়ে সাঈদ খোকন সাফ জানিয়ে দেন কঠোর অবস্থানের কথা।

এ সম্পর্কে হকার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা সেকেন্দার হায়াত বাংলানিউজকে বলেন, ‘বৈঠকে আমরা আমাদের কথা বলেছি। উনি সেগুলো শুনেছেন। আমাদের দাবি নিয়ে তিনি পরে সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর উচ্ছেদ অভিযানে তার কঠোর অবস্থানের কথাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে হকারদের পুনর্বাসন করে তাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। বাংলানিউজকে তিনি বলেছেন, শুধু উচ্ছেদ করলেই হবে না। এতোগুলো মানুষের পরিবারের বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। তাই তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এসবই সময় সাপেক্ষ যা আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।

হকারদের মিছিলে বক্তব্য দেওয়ার সময় হকার ইউনিয়নের আহ্বায়ক আব্দুল হাশিম কবির এক প্রস্তাব রাখেন কর্তৃপক্ষের প্রতি। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে আমাদের ৫ বছর মেয়াদী স্বীকৃতিভিত্তিক টোকেন দেওয়া হোক। এর মাধ্যমে আমরা প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫শ টাকা করে সিটি করপোরেশনে জমা দেবো। ৫ বছর পর হাজার হাজার কোটি টাকা জমা হবে। কারণ লাখ লাখ হকার রয়েছে সারা দেশে। যে টাকা জমা হবে এর সমপরিমাণ টাকা সরকার ভর্তুকি দিলে সেটা অনায়াসে হকারদের পুনর্বাসনের কাজে লাগবে। কিন্তু এভাবে শক্তি প্রয়োগ করে কখনোই হকার দমানো সম্ভব না।

এসময় তিনি আরও বলেন, কোনো রাজনীতি নয়, পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
জেডএফ/ওএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।