ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘বঙ্গবন্ধু ঝিল’র স্বপ্নে বেড়িবাঁধের বাসিন্দারা

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
‘বঙ্গবন্ধু ঝিল’র স্বপ্নে বেড়িবাঁধের বাসিন্দারা ‘বঙ্গবন্ধু ঝিল’র স্বপ্নে বেড়িবাঁধের বাসিন্দারা, ছবি: মিথুন

ঢাকা: সকল দখলদারের হাত থেকে মুক্ত হবে হাজারিবাগ বেড়িবাঁধের দুই ধার। বুড়িগঙ্গা শাখা হয়ে বাধের পশ্চিম দিকটাতে একসময়ে বয়ে গিয়েছিলো যে জলের ধারা তা এবার ঝিল রূপে ফিরে আসবে। নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু ঝিল’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একটি স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন। এখন তা স্বপ্ন হয়ে ধরা দিয়েছে গোটা হাজারিবাগবাসীর চোখে।

সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে পা ফেলেছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তার হাতেই বাস্তবায়িত হবে এই স্বপ্ন। হাজারিবাগের বেড়ি বাঁধের দুই ধার দখলমুক্ত হবে।

মেয়র সাঈদ খোকনের এমন ঘোষণায় এলাকাবাসী উচ্ছ্বসিত। তাদের সাথে গলা মিলিয়েছেন দখলদাররাও। তারাও বলছেন, সরকার যদি নিতে চায় নিয়ে নিক না। আমাদের কোনও বাধা নাই।
হাজারিবাগ বেড়িবাঁধে অবৈধ স্থাপনার পাশাপাশি ময়লার ভাগাড়, ছবি: মিথুনমঙ্গলবার গোটা দিন বাংলানিউজের একটি বড় টিম হাজারিবাগ বেড়িবাঁধের এমাথা-ওমাথা ঘুরে বেড়িয়েছে। এসময় কথা হয় বাঁধের দুই ধারের বাসিন্দাদের সঙ্গে। বাঁধের পাড় ঘেঁষে যাদের জীবন জীবিকা তাদের প্রায় সকলেরই মত, ফিরে পাক হাজারিবাগ তার অতীত রূপ।

এখানে হাতির ঝিলের আদলে গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধু ঝিল, বললেন বাসিন্দাদের একজন মনোয়ার।  

আগামী ৬ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেড়িবাঁধের অবৈধ দখলদারদের তুলে দেওয়া ও তাদের স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে ফেলার খবর তার জানা। বললেন, ‘এইটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত হইছে। ’

প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু ঝিল নিয়েও তিনি বেশ আশাবাদী। বললেন, এখানে হাতির ঝিলের চেয়েও বেশি মানুষ আসবে। হাতির ঝিলের চেয়ে এখানে হাজারিবাগে বেশি ঘনবসতি বলেই মত মনোয়ারের।
হাজারিবাগ বেড়িবাঁধে অবৈধ স্থাপনার পাশাপাশি ময়লার ভাগাড়, ছবি: মিথুন

সামনে ময়লা-আবর্জনায় ভরা জলাধারের যেটুকু অবশিষ্ট তা দেখিয়ে বললেন, আমরা এখানে বঙ্গবন্ধু ঝিলেরই অপেক্ষায়।

অপর এক বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বললেন, ঝিল হলে এত্ত আনন্দ হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শেখ হাসিনার কথা এখন বাস্তবায়ন কবে হয় সেটাই আমরা দেখার অপেক্ষায়।

মেয়র সাঈদ খোকন এরই মধ্যে এই এলাকায় এসে সভা করে তার এই ঘোষণা দিয়ে গেছেন বলেও জানান এই এলাকাবাসী। পেশায় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, মেয়র বলেছেন, তিনি নিজেও এখানে একসময় মাছ ধরেছেন, গোসল করেছেন।

‘মেয়র সেই ইতিহাস তুইলা ধরলো, আর বললো ওই রূপটা ফেরত আনবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাইয়া যাইতেছে,’ বলেন দেলোয়ার।

আরও বলেন, মেয়র তখন পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করে গেছেন, এলাকাবাসীকে অনুরোধ করে গেছেন, কাউন্সিলরদের অনুরোধ করে গেছেন। বলেছেন- আপনারা এই রক্ষাটা আমাদের করেন। এখানকার ময়লা আবর্জনাগুলো সরিয়ে নিতে চাই।

মেয়র জোর গলায় বলে গেছেন, অনুরোধ করে গেছেন। তিনি বলেছেন, আপনারা মসজিদও যদি কেউ বানিয়ে থাকেন সেটা ভেঙ্গে ফেলেন, বললেন এই হাজারিবাগ বাসিন্দা।

এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। বুড়িগঙ্গার পাড়ে অবৈধ একাধিক স্থাপনা এরই মধ্যে সরিয়ে সেখান থেকে মাটি কেটে বাঁধ বের করার কাজ চলছে। ট্রাক ভর্তি করে সে মাটি নেওয়া হচ্ছে। ১০-১৫ মিনিট পরপরই একেকটি ট্রাক বাঁধের সড়ক ধরে মাটি নিয়ে চলে যাচ্ছে এ দৃশ্য তারা দেখছেন।

এই বাঁধের চারিধার পরিষ্কার করতে যে উচ্ছেদ অভিযান হবে তার বিপক্ষে কেউ থাকবে বলেই মনে করেন না এই মানুষগুলো।

দেলোয়ার বলেন, এখানে যারা দখলদার তাদের অধিকাংশই ভাসন্ত। এখানে এমন কিছু নাই যেটা উঠে গেলে আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
‘বঙ্গবন্ধু ঝিল’র স্বপ্নের কথা শোনাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, ছবি: মিথুনকথায় কথায় অতীতেই ফিরে যান মানুষগুলো। বলেন, এখানে আমরা একসময় মাছ ধরছি, খেলা করছি, শুয়ে থাকছি দুর্বার উপরে।

এপার থেকে ওপার সাঁতরে পার হয়েছেন তারা। এই নদীর পানিতে তাদের রান্না হয়েছে।

সেই মাছ আর সেই ভাত রান্না আর হবে না, সেটা তারা নিশ্চিত। তবে হাজারিবাগবাসী এটুকু বুঝতে পারছেন এর সৌন্দর্যটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

আগের সেই একই জলের ধারা হয়তো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না, তবে হাতিরঝিলের মতো একটি বঙ্গবন্ধু ঝিল হলেই তারা খুশি।  

এতে হাজারিবাগের পাড়ে আনন্দ ফিরে আসবে বলেই মনে করছেন তারা।

আরও পড়ুন:
**মেয়র চাইলে খাল উদ্ধার সম্ভব, আমরা সাথে আছি
** সবাই চান খালটি ফিরে আসুক

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।