ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন

ঢাকা: বহুল আলোচিত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমানে পরিকল্পনা চলছে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) নিয়ে। এক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচনেই ডিভিএম ব্যবহার করতে চায় সংস্থাটি।

২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৮ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের ‘সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ’ কেন্দ্রে একটি ইভিএম মেশিনে ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে সে ইভিএম থেকে আর ভোটগণনা করা যায়নি।

এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তেজনাপূর্ব পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে সে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ বাতিল করে কিছুদিন পর আবার ব্যালট পেপারেই ভোটগ্রহণ করতে হয়। এরপর সেই মেশিনটি বিকল হওয়ার কারণ জানতে এবং তা সারাতে না পারা পর্যন্ত সব ধরনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসে ইসি।

এদিকে, সাড়ে তিন বছরে ইভিএমের ত্রুটি সারাতে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) কাছে কয়েক দফা চিঠি দেয় ইসি। কিন্তু এতে বুয়েট কোনো দায়িত্ব নেয়নি। অবশেষে নিজেরাই এ যন্ত্রটি উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয় সংস্থাটি।
 
এজন্য ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই এক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। এতে ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের ত‍ৎকালীন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান সালেহ উদ্দিন ইভিএম এর কারিগরী উন্নয়ন আনার প্রস্তাব দেন।
 
জানা যায়, বর্তমানে যে ইভিএমটি রয়েছে এতে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা অনুসারে বোতামে টিপ দিয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু ভোটারের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ইভিএমের সঙ্গে এমন একটি সেন্সর লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে ভোটারের আঙুলের ছাপও সংরক্ষণে থাকবে। যা ইসির এনআইডি শাখায় সংরক্ষিত রয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ভোটার ভোট দিতে এলে প্রথমেই তার আঙুলের ছাপ নিয়ে মিলিয়ে দেখা হবে, সে সত্যিকারের ভোটার কিনা। এছাড়া এটিএম কার্ড সোয়াইপ করার মতো স্মার্টকার্ড ব্যবস্থা থাকবে। এসবের পর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে ভোট দেওয়ার অনুমিত দেবেন প্রিজাইডিং অফিসার। তখন বোতামে চাপ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন তিনি।

প্রস্তাবটির সুবিধা-অসুবিধা এবং উকর্ষতা সাধনে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে উপদেষ্ট করে ২৫ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যে কমিটি ইভিএম এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটি উন্নত ভোটিং মেশিন তৈরির জন্য কাজ করছে। তবে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইভিএম যেহেতু ঠিক করা যায়নি, তাই আগের মেশিনটি বাদ। এখন নতুন করে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন তৈরি করতে হবে।
 
এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ইভিএম নয়, এখন আমরা ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের (ডিভিএম) পরিকল্পনা করছি। এক্ষেত্রে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে উপদেষ্টা করে ২৫ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কাজ হবে।

২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিগত নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যাবহারের প্রচলন করে। ‌আর বর্তমান কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদর নেতৃত্বাধীন কমিশন ইভিএম ব্যবহারে জন্য নির্বাচনগুলোর বিধিমালায় পরিবর্তন আনে।

ইসি সচিব বলেন, প্রয়োজনের আইন-বিধিমালা পরিবর্তন করে ডিভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে এটা নির্ভর করবে টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাবের ওপর। কমিটি কাজ করছে। দেখা যাক কী হয়। টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আগের মতোই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে মেশিন তৈরির কাজ দেওয়া হবে, নাকি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি তৈরি করবে। দেশের কেউ যদি না পারে তবে বাইরের কাউকে দিয়ে তৈরি করিয়ে নেব। এজন্য প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।

সচিব বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা। তবে এজন্য যথেষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ব্যবহার করে সাফল্য এলেই কেবল জাতীয় নির্বাচনে ডিভিএম ব্যবহার করা হবে। অন্যথায় ব্যবহার করা যাবে না।
 
আরও পড়তে...
**ভোট কারচুপি ঠেকাতে আঙুলের ছাপে হবে ইভিএম
**ইভিএম এখন ইসির কোটি টাকার গলার কাঁটা!
**অবশেষে বুয়েটকে ইভিএম ফেরত দিতে বললো ইসি
**ইভিএম ত্রুটির সমাধান এখনো পায়নি ইসি
**কার্যকর ইভিএম পেলে বিনিয়োগ করবে ইসি
**প্রসঙ্গ ইভিএম: বুয়েট ছাড়া উপায় নেই


বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।