ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলমের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলমের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলমের তোলা ছবি

ঢাকা: রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলমকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আহবান জানিয়েছে তার পরিবার। এজন্য তার স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা আকুল আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেছেন, দেশের ফটো সাংবাদিকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের তথ্য অধিদপ্তরের থেকে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া একমাত্র ওয়্যার ফটোগ্রাফার। তাই যুদ্ধ ক্ষেত্রের ঐতিহাসিক অনেক দুর্লভ মুহূর্ত ক্যামেরার ফ্রেমে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলমের তোলা ছবি

মোহাম্মদ আলমের তোলা ইতিহাস সমৃদ্ধ ছবিগুলো পৃথিবীর বহু বিখ্যাত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। যুদ্ধের সেই সব ছবি দেখে কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব বিবেক। সাক্ষী হয়েছিলো বাঙালি জাতির চির গৌরবময় ইতিহাসের। কেবল ক্যামেরা নিয়ে যুদ্ধের ছবি ধারণ নয়, এক কাঁধে ক্যামেরা, অন্য কাঁধে অস্ত্র নিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছেনও তিনি।

ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ আলম মুক্তিযুদ্ধের নয় নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জলিল ও ডেপুটি কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম নুরুল হুদার তত্ত্বাবধানে যুদ্ধ করেন।

ফায়ারিং, র‌্যাংকিং করা, হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়া, মাইন ব্লাস্ট ইত্যাদির প্রশিক্ষণ শেষে তাকে দেওয়া হয় চাইনিজ মেশিনগান ও রিভলবার। হিংগেলগঞ্জ দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়ার কাজ। ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানা শত্রুমুক্ত করতে সম্মুখ সমরে অংশ নেন তিনি। রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলমের তোলা ছবি

২৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল মেজর জলিলের নির্দেশে ক্যাপ্টেন হুদার নেতৃত্বে সেই অপারেশনে অংশ নেয়। তারা নৌকাযোগে ইছামতি নদী পার হয়ে কোমর সমান কাদা রাস্তা ভেঙে থানার কাছাকাছি সড়কে পৌঁছুতেই পাক বাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে যান। মুক্তিযোদ্ধা দলটি ক্রলিং করে অগ্রসর হয়ে পাশের একটি বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেয়। ভোরে তারা হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে শ্যামনগর থানা দখলমুক্ত করে।

পরে গভীর রাতে তারা ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি হন। পাক বাহিনী চারদিক থেকে আক্রমণ করায় তারা থানা থেকে বেরিয়ে আসেন। সে সময় হানাদার বাহিনীর মর্টারসেলের এলোপাতাড়ি গুলিতে বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বেঁচে যান মোহাম্মদ আলমহসহ ৩০/৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা।
 
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলমের তোলা ছবিমোহাম্মদ আলমের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে তাকে ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার হিসেবে নিয়োগ দেন।

বিশ্বনেতাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবি, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের যেসব ছবি এখন আমরা দেখতে পাই সেগুলোর অধিকাংশই মোহাম্মদ আলমের তোলা। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় যোগদান করেন মোহাম্মদ আলম। তারপর দৈনিক সংবাদে, সর্বশেষ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার চিফ ফটোগ্রাফার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়। ২০১০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয় তাকে।

এছাড়াও মোহাম্মদ আলম ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সদস্য ও বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলমের তোলা ছবি

তাই মোহাম্মদ আলমের পরিবারের দাবি, মহতি এই বীরের নাম শ্যামনগর থানার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

এজন্য গত ১১ ডিসেম্বর (২০১৬) শ্যামনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডারের বরাবর আবেদন করা হয়েছে। ২৭ ডিসেম্বর আবেদন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।