আব্দুল আলী মোল্লা বাগেরহাটের ১৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার আসামি। গত বছরের ১৬ জুলাই ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আসামিদের মধ্যে অন্য চারজনও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
আগে গ্রেফতার হওয়া চারজন হলেন- খাঁন আকরাম হোসেন (৬০), শেখ মোহাম্মদ উকিল উদ্দিন (৬২), ইদ্রিস আলী মোল্লা (৬৪) ও মো. মকবুল মোল্লা (৭৯)।
এখনও পলাতক নয়জন হচ্ছেন- খাঁন আশরাফ আলী (৬৫), সূলতান আলী খাঁন (৬৮), মকছেদ আলী দিদার (৮৩), শেখ ইদ্রিস আলী (৬১), শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল (৬৪), রুস্তম আলী মোল্লা (৭০), মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার (৬৯), মো. হাশেম আলী শেখ (৭৯) ও মো. আজাহার আলী শিকদার (৬৪)।
আসামিরা মোড়েলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও একজন খুলনায় থাকতেন। একাত্তরে তারা প্রথমে মুসলিম লীগ ও পরে জামায়াতের সমর্থক হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে সবাই জামায়াতের সঙ্গে জড়িত হলেও একজন বিএনপির সমর্থক।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে আব্দুল আলী মোল্লাকে তার বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের উদানখালি গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে কচুয়া থানা পুলিশ। রাতেই তাকে ঢাকার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
গত রোববার (২২ জানুয়ারি) ওই ১৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা। সেদিনই তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।
আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা-গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ২২ জনকে হত্যা, ৪৫/৫০টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠনের পর আগুনে পুড়িয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা, ২ জনকে অমানুষিক নির্যাতনে গুরুতর জখম করা এবং ৪ জন নারীকে দীর্ঘদিন রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করা।
কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাগেরহাটের কচুয়া ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় তারা এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ২০১৫ সালের ০৪ জুন থেকে রোববার পর্যন্ত তদন্তকাজ সম্পন্ন করে সাতটি ভলিউমে মোট ১ হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করেন।
মোট ৬১ জন সাক্ষী দেবেন ১৪ আসামির বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে ৫৭ জন ঘটনার সাক্ষী, তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ৩ জন জব্দ তালিকার সাক্ষী।
গত বছরের ১৬ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ওই ১৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই সন্ধ্যায় বাগেরহাট ও খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন জানান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাট জেলায় মোট ৬৩টি মামলা হয়। সেগুলো তদন্ত করে রামপালের ডাকরা গণহত্যা, কচুয়ার শাঁখারিকাঠি গণহত্যাসহ বেশকিছু লোমহর্ষক মামলা আমলে নেওয়া হয়।
এর মধ্যে আব্দুল আলী মোল্লাসহ ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৮ জুন মামলাটি করেন একাত্তরে তাদের হাতে শহীদ উকিল উদ্দিন মাঝির স্ত্রী উদানখালি গ্রামের ফতেমা বেগম। কচুয়া থানায় দায়ের করা হত্যা মামলাটিতে বাদিনী অভিযোগ করেন, একই গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লাসহ অন্য রাজাকাররা ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে তার স্বামী উকিল উদ্দিন মাঝিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে উদানখালী কাঠেরপুলের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত শেষে উকিল উদ্দিন মাঝি হত্যাসহ সাতটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এসব অপরাধে সম্পৃক্ত বাগেরহাটের ওই ১৪ রাজাকারকে চিহ্নিত করা হয়। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগগুলো জমা দেওয়া হলে আমলে নিয়ে শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পেয়ে পুলিশ ১৪ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
আরএ/এএসআর