অথচ পদ্মার দুই পাড়ের ঘাটগুলোর অনুন্নত অবকাঠামো, নদী ভাঙনে ঘাটের আয়তন কমা, ফেরি স্বল্পতা, যানবাহনের আধিক্য, নদীতে নাব্যতা সংকট ও সংযোগ সড়কের বেহালদশাসহ নানা কারণে সমস্যা-দুর্ভোগ ও দুই পাড়ে মারাত্মক যানজট নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ঈদসহ অন্যান্য উৎসবে যানজট ভয়াবহ রুপ নেয় ব্যস্ততম ঘাটগুলোতে।
ফেরিঘাটের তীব্র যানজটের কথা চিন্তা করে অনেকেই এ নৌ-রুটে যেতে ভয় পান।
এসব দুর্দশা লাঘবে বিদ্যমান ঘাটগুলোকে পর্যায়ক্রমে ভেঙে আধুনিক মানের ফেরিঘাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া এবং রাজবাড়ী উপজেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া- উভয় ফেরিঘাটকেই ঢেলে সাজানো হবে। দুই পাড়ের দূরত্ব ৪ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার।
‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নদীবন্দর আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৯৪ কোটি টাকা। তবে প্রয়োজন অনুসারে আরও ব্যয় করতে চায় মন্ত্রণালয়। চলতি সময় থেকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিয়তই ফেরিঘাটগুলোর অবস্থা বেহাল হচ্ছে। দেড় বছর আগে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের এক, দুই, তিন ও চার নম্বর ঘাটের দৈর্ঘ্য ছিল যথাক্রমে ৮৯০ ফুট, ৭১০ ফুট, ৩৮০ ফুট ও ১৭৫ ফুট। এর মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে চার নম্বর ঘাটটি। বর্তমানে অন্য তিনটি ঘাটের অ্যাপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য হয়েছে যথাক্রমে ৫২৮ ফুট, ৩৮০ ফুট ও ২০০ ফুট। এ অবস্থা চলতে থাকলে ওই তিন ঘাটও বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই পাড়ের ফেরিঘাটগুলো দিয়ে প্রতিদিন ১৮টি ফেরি পারাপার হয়। এর পাশাপাশি ৬০ থেকে ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে নৌ-পথে। নির্বিঘ্নে ফেরি চলাচল ও যানবাহন পারাপারে প্রতিটি ফেরিঘাটকেই সচল রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি ঘাটগুলোতে যানবাহন ও যাত্রী সাধারণের সকল নাগরিক সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসব কারণে প্রকল্পের আওতায় উন্নত দেশের আদলে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ার সবগুলো ফেরিঘাট পুনর্নির্মিত হবে। স্টিলের নতুন ফেরিঘাট নির্মাণসহ বর্তমানগুলো ভেঙে নতুনভাবে নকশা করা হবে।
আধুনিক ফেরিঘাটে রুপ দিতে এতে থাকছে একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক কাজও। এসবের মধ্যে আধুনিক সুবিধাদি সম্বলিত বহুতল টার্মিনাল ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা, নতুন ফেরিঘাট নির্মাণ, আরসিসি পার্কিং ইয়ার্ড, অভ্যন্তরীণ রোড এবং ফেরিঘাট অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হবে। ড্রেনেজ সিস্টেম, বাউন্ডারি ওয়াল, ফেন্সি ওয়ালসহ ফেরিঘাটের কাছে নদীর তীরও শক্তভাবে রক্ষা করা হবে। স্পাডসহ ফেরিঘাটে স্টিল জেটি নির্মাণ করা হবে। উভয় পাশেই উন্নতমানের ফোরলেন সংযোগ সড়ক থাকবে। উন্নত দেশের আদলে ফেরিঘাটে থাকবে ইকোপার্ক ও প্লেগ্রাউন্ডও। ঘাটে নৌ-যানগুলোর আগমন-নির্গমন ও ফেরিতে পারাপারের জন্য অপেক্ষমান যাত্রী এবং পরিবহনগুলোর জন্যও থাকছে উন্নত টার্মিনাল ও পার্কিং সুবিধা।
ফেরিঘাটগুলোর স্থায়ী উন্নয়নে নদীশাসনও করা হবে। এর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক ও ঘাটের চারপাশের সৌন্দর্য বর্ধনে প্রায় ১২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-প্রধান (পরিকল্পনা উইং) এনায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সকল অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে পদ্মার দু’পারের সবগুলো ঘাটই ঢেলে সাজাবো। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কোনো যাত্রীবাহী ও মালবাহী পরিবহনকেই ঘাটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে না। এর ফলে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধশালী ও প্রসার ঘটবে বলেও আশা করছি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর