এ দৃশ্য রাজধানীর আড়ং এর সামনে থেকে লালমাটিয়া যাওয়ার সড়কটির। গত একমাস আগে খোঁড়া হয়েছে সড়কটি।
অপ্সরার মা রুমানা বলেন, বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বিরক্তির সীমা থাকে না। হেঁটে নিলে লাফালাফি করে। কখন যে গর্তে পড়ে এ আশংকায় থাকি সবসময়।
ওই রাস্তা ধরে বড় একটি ব্যাগে বাজার করে নিয়ে যাচ্ছেন লালমাটিয়ার আফসার আহমেদ। তিনি বলেন, এমন তো প্রতিবছরই হয়। এ আর নতুন কি। আমাদের ভোগান্তি কি কারো চোখে পড়ে?
সড়কের ভেতরের পানি ও ড্রেনের লাইনের কাজ করায় বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানের পাইপ লাইন। অনেক স্থানে দেখা গেলে ড্রেনের লাইন থেকে উপচিয়ে মলগুলো সড়কে এসে জমে আছে। ফলে ওইসব রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় বিরক্তিতে মুখে নাক ধরে চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
লালমাটিয়া স্বপ্নপুরী হাউজিংয়ের এক বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, সকালে বের হলে উটকো গন্ধে বমি হওয়ার অবস্থা হয়। কারণ ওই সময়টায় ড্রেনের পানি উপচিয়ে রাস্তায় চলে আসে।
এবারের দেখা যাক মোহাম্মাদপুর বাসস্ট্যান্ডের চিত্র। সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে কয়েকমাস আগে। কিন্তু খোঁড়ার পর রাস্তা মসৃণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২৪ ঘণ্টাই ওই সড়কের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে খানা খন্দকে ভরে গেছে মূল গোলচত্বরটি। ফলে গাড়ি চালাতেও নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ড্রাইভারদের।
সিটি বাসের ড্রাইভার করিম জানান, ‘গাড়ি চালানোর অনেক সমস্যা হয়। রাস্তার এ অবস্থার কারণে অনেক সময় হেইল্লা দুইল্লা চলে। যাত্রী গো কথা শুনতে হয়। ’
সংস্কার কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়ার পর খোয়া আর বালুর যে স্তর দেওয়া হয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভাষায় একে বলে সাবগ্রেডিং। এরপর পিচঢালা করে কার্পেটিং কাজ করতে হয়। কিন্তু রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে দেখা যায় সাবগ্রেডিং করার পর কার্পেটিং ফিনিসিং দেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা। ফলে একটু বাতাসেই ধুলো উড়ে পড়ে আশেপাশের দোকানগুলোতে। সেটাও আরেক ধরনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেকের কাছে।
ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফিফা আফরিন জানান, ধুলোয় আমার প্রচুর সমস্যা হয়। নাকে মাস্ক লাগাই। কিন্তু চোখে তো কিছু লাগাতে পারি না। অনেক সময় ধুলোর কারণে চোখ চুলকায় আর লাল হয়ে যায়।
এদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে সংস্কারের পর রাস্তাগুলো যেন টেকসই হয় সে কারণেই সময় বেশি লাগছে। জনগণের স্বার্থে ভালো কাজ করা হচ্ছে বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের।
মোহাম্মদপুরের ৩১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তা, ড্রেনের পাইপ সংস্কারের জন্য আমাদের টেন্ডার হয়েছে। আমরাও কাজ শুরু করে দিয়েছি।
সময়ের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কের নিচে পানির লাইন, গ্যাস লাইনসহ বিভিন্ন পাইপ ও তার থাকায় কোদাল দিয়ে কাজ করতে পারছে না শ্রমিকরা। ফলে কাজের দেরি হচ্ছে।
তবে কাজ এগোনোর জন্য কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাই জরুরি বলে জানালেন সড়ক সংস্কার কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক। তিনি বলেন, কাজ বেশি দিনের। তবে যদি শ্রমিক বেশি লাগানো যায় আর যদি বেশি টাকা দেওয়া হয় শ্রমিকদের, তাহলে অধিক শ্রম দিয়ে কাজ করা হবে। কাজও তাড়াতাড়ি এগুবে।
টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী সড়ক পেতে হলে প্রাথমিকভাবে কিছুটা কষ্ট সহ্য করতেই হবে জনগণকে। এমন মন্তব্য করলেন ৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান। তিনি বললেন, আমরা জনগণ কষ্ট দিতে নয় বরং তাদের স্বার্থেই কাজ করছি। আড়ংয়ের সামনের রাস্তাটি একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যেত। ভরে যেত ড্রেনের লাইনও । এসব কিছু আলাদা আলাদাভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। যাতে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারে।
তবে বর্ষা মৌসুমের আগেই সব ধরনের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ারও আশ্বাস দেন এই নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
জেডএফ/আরআই