আমেরিকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এ নিদর্শন তুলে ধরতেই স্কুলের ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’র মতো করে সেজেছিল মাইশা হক।
ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এ শিক্ষার্থীকে তার বাবা এনামুল হক সাজিয়ে দিয়েছিলেন এমনটি।
এ খুদে শিক্ষার্থীর ছোট ভাই প্রথম শ্রেণির ছাত্র মঈন হক মাহিও নিজেকে সাজিয়েছিল ঢাকার শিশু একাডেমির সামনে তৈরি ‘দুরন্ত’ ভাস্কর্য রুপে।
অতিথি-দর্শকদের অভিভূত করে আবার দুই ভাই-বোন জিতে নিয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারও।
প্রতিযোগিতায় জঙ্গলি শিশু সেজেছিল প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরফান উল্লাহ রোহান। ধারা ভাষ্যকার যখন বলছিলেন, রোহান জঙ্গলি সাজলেও ও অনেক মিষ্টি, নম্র, ভদ্র। তখন লাজুক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাচ্ছিল এ শিক্ষার্থী। তার ঝুলিতে গেছে তৃতীয় পুরস্কার।
শুধু মাইশা, মাহি বা রোহান নয়, এমন আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী সমকালীন বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে নিজেদের সাজিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুল এবং কলেজটির তিন দিনব্যাপী ২৪তম আন্ত:হাউজ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী দিনে ফুটে উঠেছিল সমাজ বাস্তবতার চিত্র।
শিক্ষার্থীদের এসব সাজগোজ উৎসাহভরে উপভোগ করেছেন অতিথি-দর্শকরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের রূপকার, স্বার্থক নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও যেন যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতার সাজে হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত।
তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নানা মুহুর্ত যেমন বাঙালি জাতিকে টেনে নিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দিনগুলোতে। তেমনি বঙ্গবন্ধু সেজে শিশু মাহিদ তাজুয়ার রোহেদ তর্জনি নির্দেশ করে জানান দিলো বাঙালির ঠিকানা।
রোহেদ বাংলানিউজকে বলে, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। বাবা-মায়ের মুখ থেকে শুনেছি, তার ভাষণ আমাদেরকে মুক্তির চেতনায় উজ্জীবিত করেছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’।
‘আমার বাবা-মা’কে ফিরিয়ে দাও’ বুকের মাঝে এ প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে রোহিঙ্গা শিশু সেজে আকুতি জানাচ্ছিল খুদে শিক্ষার্থী জাওয়াদ। তার প্ল্যাকার্ডের পেছনে লেখা ‘সব হারানো রোহিঙ্গা শিশু’।
মাথায় মাতলা, হাতে কাঁচি, গামছার ভেতরে খাবার, বুকের মাঝখানে ঝুলানো হুক্কা আর হাতের লাঠিতে ধান নিয়ে গ্রাম বাংলার মাঠের আসল নায়ক কৃষক সেজেছিল তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহাদ জাকির আদর।
তবে অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধার মা’ সাজা আলিফ আকন্দ জোহাইনার কান্না।
‘আইন্নেরা কী জানুইন, মাইনসে কেন আমারে পাগলা কয়? আমার পোলা মুক্তিযুদ্ধে গেছিল বইল্লা রাজাকাররা পাকিস্তানি হানাদার লইয়া আমার ঘরে আইছিল। আমার স্বমীরে (স্বামী) মাইরা হালছে। রক্তে ভাইসা গেছে ঘর। আমার মাইয়ারে টাইন্ন্যা হেঁচড়াইয়া লইয়া গেছে। যুদ্ধ শেষ হলো, দেশ স্বাধীন হলো, পোলাডা আর ফিইরা আইলো না। আপনারা কী পারবেন আমার পোলা, স্বামী আর মাইয়্যাডারে ফিরাইয়া দিতে’- শীত বিকেলের সোনাঝরা রোদ্দুর মাখা মাঠে এ সংলাপ আওড়ে বেড়াচ্ছিল জোহাইনা।
স্ট্যাচু অব লিবাটি সাজা মাইশার মা মাহফুজা রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সৃজনশীলতা তরুণ প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য। এমনকি স্কুলের যেমন খুশি তেমন সাজো ইভেন্টেও থাকে এর প্রয়োগ। আমার সন্তানসহ খুদে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ছিল তারই ছাপ’।
এর আগে দুপুরে সম্মিলিত কুচকাওয়াজের মাধ্যমে সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে ১৯ পদাতিক ডিভিশন ও ঘাটাইল এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল সাজ্জাদুল হক প্রধান অতিথি ছিলেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন তার স্ত্রী আফসানা সাজ্জাদ।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
এমএএএম/বিএসকে/এএসআর