ভ্যানে করে চুলাসহ পিঠা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে এসেছেন তিনি। কয়েক মিনিটের মধ্যে চুলায় আগুন জ্বালিয়ে শুরু করে দিলেন পিঠা তৈরির কাজ।
মজার ব্যাপার হলো, ফারুক তার দোকান বসানোর আগ থেকেই পিঠা নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা পিঠা কিনে যে যেদিক দিয়ে যান, পিঠার সুবাস আশপাশের মানুষদেরকেও জানান দিয়ে যায়।
শীতকালীন চিতই-ভাপা পিঠা দোকানি ফারুক দিনাজপুর শহরের খালপাড়া ঠনঠনিয়াপট্টি এলাকার বাসিন্দা। এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান তার। ৭ বছরের ছেলে রকি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে আর মেয়ে সুকন্যার বয়স ৩ বছর। ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমের তিন মাস নিমতলায় পিঠার ব্যবসা করেন তিনি। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠা তৈরি ও বিক্রি করেন। দোকানের পাশে রাখা হয়েছে আসন। যেখানে বসে ক্রেতারা পিঠা খান, পাশাপাশি রয়েছে খাবার পানির ব্যবস্থাও। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের ৩শ’ থেকে ৪শ’ ক্রেতা এখানে এসে তার কাছ থেকে পিঠা কেনেন। অনেকে আবার ৫, ১০, ২০ পিস করে পার্সেল বাড়িতে নিয়ে যান।
তিনি জানান, শীতকালীন পিঠার ব্যবসা চালাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। হাট বা বাজার থেকে সপ্তাহের প্রয়োজন অনুসারে সুগন্ধি চাল কিনে আনেন। পরে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই মণ সুগন্ধি চাল ভাঙিয়ে আটা করতে মিলে দেন। মিল থেকে চালের গুঁড়া হওয়ার পর দোকান নিয়ে বসেন। পিঠা তৈরি করতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে জ্বালানি হিসেবে খড়ি, খেজুরের গুড়, চিনি, নারকেল, ঝাল প্রকৃতির যেকোনো ভর্তা ও খাওয়ার সোডা ব্যবহার করা হয়।
প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই মণ আটার পিঠা বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে দিনে ৮শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা লাভ হয়। যার মধ্যে সংসার ও সন্তানের পড়াশোনার খরচ বাদ দিয়ে ৪-৫শ’ টাকা করে প্রতিদিন সঞ্চয় করেন ফারুক।
সাধারণ চিতই ও ভাপা পিঠা প্রতি পিস ৫ টাকা, স্পেশাল পিঠা ১০ টাকা ও ডিম চিতই ২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। পিঠার মৌসুম শেষে ভূট্টা-ফলমূল বিক্রিসহ অন্য ব্যবসা করেন ফারুক।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুখসানা আক্তার রুনা বাংলানিউজকে বলেন, ‘পেশাগত কাজ ও পারিবারিক ব্যস্ততায় বাড়িতে পিঠা তৈরি করা হয় না। তাই এখানকার সুগন্ধি চালের চিতই-ভাপা পিঠা সন্তানদের জন্য নিয়ে যাই। নিমতলা বাজারের পিঠার সুগন্ধ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। খেতে খুব মজাদার, দামও কম। সকল শ্রেণীর মানুষ খেতে পারছেন’।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
বিএসকে/এএসআর