ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সব আবর্জনা-পয়ঃনিষ্কাশন জিরানী খালে

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
সব আবর্জনা-পয়ঃনিষ্কাশন জিরানী খালে জিরানী খাল বুজে যাচ্ছে আবর্জনা-পয়ঃনিষ্কাশনে- ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী (জিরানী খাল) ঘুরে: নন্দীপাড়া বাজার থেকে উত্তর-পূর্বমুখী প্রায় আড়াই কিলোমিটারের ত্রিমোহনী সড়ক মিলেছে ত্রিমোহনী ব্রিজে। সড়কের পাড়ঘেঁষে বয়ে গেছে মান্ডা খালের নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী অংশটি। পশ্চিম দিক থেকে এসে রামপুরা খাল মোহনা ছুঁয়ে মিশেছে বালু নদীতে। অন্যটি পূর্ব দিকে আসা মেশা মান্ডা খালের অন্য একটি শাখা। এই তিন খালের মিলিত স্থান ত্রিমোহনী। অর্থাৎ তিন মোহনা।

নন্দীপাড়া থেকে ত্রিমোহনী সড়কের হাতে হাত ধরে এগিয়ে গেছে মান্ডা খালের অংশটি। ওয়াসার খাতায় এর নাম ‘জিরানী খাল’।

ভরাট ও অবৈধ দখল হতে হতে এর প্রস্থ এখন ৩০ ফুটে ঠেকেছে।

সোমবারের (২৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে নজরে আসে, ৩০ ফুট খালের সীমানা নির্ধারণ করে পিলার পুঁতেছে ওয়াসা। স্থানীয়রা জানান, এগুলো বছর দু’য়েক আগে পোঁতা।
জিরানী খাল বুজে যাচ্ছে আবর্জনা-পয়ঃনিষ্কাশনে- ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা
খালের সড়কঘেঁষা পাড়জুড়ে অবৈধভাবে তোলা হয়েছে দোকানপাট। রয়েছে- মুরগি, শাকসবজি, চা, হোটেল, কাঠ, জ্বালানি কাঠ, মুদি দোকান, হাঁড়িপাতিল, দরজি দোকান, রিকশা-সাইকেল সারাই, সেলুন, বিস্কুটের কারখানা, রিকশা-সাইকেল গ্যারেজ, ভাঙাড়ি, মাছের দোকান, পান-সুপারি, বেড-বালিশ প্রভৃতির দোকান।

খালের পাড়ঘেঁষে কেবল দোকানপাটই নয়, রয়েছে বাড়িও। নিম্নবিত্ত মানুষ সব। কোথাও থাকার জায়গা নেই তাই সরকারি জমি পেয়ে টিন বা কাঠের বাড়ি তুলেছেন।

এ পাড়ের দোকানপাট ও বাড়িঘরের যতো ময়লা-আবর্জনা, সবকিছুর ঠিকানা এই খাল। যেনো খালটি গণ ডাস্টবিন। ময়লা ফেলতে ফেলতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে রোজ ফেলতে লাগলে, ময়লা-আবর্জনাতেই খাল বুজে যাবে শঙ্কা সচেতন স্থানীয়দের।
জিরানী খাল বুজে যাচ্ছে আবর্জনা-পয়ঃনিষ্কাশনে- ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা
ওপাড়জুড়ে কাঁচা-পাকা বাড়িঘর। চার-পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে। প্রত্যেকেরই দাবি, এসব ব্যক্তি মালিকানার জমি। ওইসব বসতবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের ঠিকানাও এই খাল। বাড়িগুলো থেকে ময়লা পানি বহন করে নিয়ে আসা পাইপ এসে শেষ হয়েছে খালে।

অথচ বোর্ডে লেখা ঢাকা ওয়াসার পরিষ্কার নির্দেশ- ‘খালের মধ্যে সাঁকো, পানির লাইন, মাচা, ঘরবাড়ি, টয়লেট, দোকান, রিকশা গ্যারেজ ইত্যাদি নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ’।
জিরানী খাল বুজে যাচ্ছে আবর্জনা-পয়ঃনিষ্কাশনে- ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা
অবশ্য খোদ ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন খালে এসে এসে মিশেছে। খালপাড়ে জেলা পরিষদ নির্মিত দোতলা মাদারটেক-নন্দীপাড়া বাণিজ্যিক বিপনী মার্কেটের পেছন দিকে দেখা গেলো, মোটা সিমেন্টের পাইপ দিয়ে বিরামহীন ময়লা পানি এসে পড়ছে খালে।  

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রাথমিকভাবে আগামী ০৬ ও ০৯ ফেব্রুয়ারি, নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খাল ও হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার অবৈধ জায়গা দখলমুক্তির জন্য অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন।
জিরানী খাল বুজে যাচ্ছে আবর্জনা-পয়ঃনিষ্কাশনে- ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা
অবৈধ জায়গা দখলমুক্তি ও স্থাপনা উচ্ছেদের প্রধান কারণ, প্রায় মরে যাওয়া খাল পুনরুদ্ধার।

সেক্ষেত্রে ওয়াসার নির্দেশ অনুযায়ী, অবৈধ জায়গা ও স্থাপনার পাশাপাশি খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবিউল হোসাইনের সঙ্গে কথা হয় নন্দীপাড়া মূল বাজারে। তার চাওয়া, মেয়র অবৈধ জায়গা দখলমুক্তি ও স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারেও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।