ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

খোঁড়াখুঁড়িতে হাজার গাছের প্রাণ সংহার

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
খোঁড়াখুঁড়িতে হাজার গাছের প্রাণ সংহার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে হাজার গাছের প্রাণ সংহার/ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর/ লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর’। আজ থেকে ১শ’ একুশ বছর আগে নগর ‘সভ্যতার প্রতি’ এ আকুতি জানিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সোয়া শ’ বছর পরে এসে ইট, লোহা, কংক্রিট, কাঁচ ও পাথর সভ্যতায় মোড়ানো মহানগর ঢাকায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে কান পাতলে এ আকুতি আরো গভীর, আরো নিবিড়, আরো করুণ ও নিদারুণভাবেই শোনা যাবে।

কারণ, রবীন্দ্র সময়ের নগরসভ্যতার চেয়ে বর্তমান সময়ের নগরসভ্যতা আরো বেশি নিরস, নির্জীব ও প্রাণহীন।

‘এখানে স্বস্তি নেই, এখানে শান্তি নেই’... এখানে ‘ইটের পাঁজরে, লোহার খাঁচায় দারুণ মর্মব্যথা’!

নগরের অভিজাত এলাকা গুলশান এভিনিউ’র এই মর্মব্যথা আরো বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় গুলশান-১ নম্বর সার্কেলের শ্যুটিং ক্লাব থেকে গুলশান-২ নম্বর স‍ার্কেলের পাকিস্তান হাই কমিশন পযর্ন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা সড়ক বিভাজনে কংক্রিটের দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে হাজার গাছের প্রাণ সংহার/ছবি: আনোয়ার হোসেন রানামাটির গভীরে সোয়া ২ ফুট এবং উপরে ২ ফুট উচ্চতার এই দেয়াল নির্মাণে কাজ শুরুর পর থেকে সড়ক বিভাজনে থাকা কয়েক হাজার গাছ এরই মধ্যে মারা গেছে। গাছের প্রাণ সংহারী এই প্রকল্প নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ না-কি বুঝতেই পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এত গাছ মারা যাবে!

গুলশান-১ নম্বর সার্কেলের গোলচত্বর থেকে গুলশান-২ নম্বর সার্কেলের পাকিস্তান হাই কমিশন পযর্ন্ত হেঁটে গেলে চোখে পড়বে হাজার হাজার উইপিং দেবদারু, বোতল ব্রাশ ও ঝাউগাছ মরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেনো আগুনে পুড়ছে নগর। মরে দাঁড়িয়ে থাকা বয়স্ক উইপিং দেবদারু গাছগুলো দেখলে বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠবে যে কারো। তবে পরম বন্ধুর মতো অক্সিজেন বিলানো গাছগুলোকে হত্যার দায় নিতে নারাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গুলশান-২ নম্বরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির চিত্র/ছবি: আনোয়ার হোসেন রানাডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রি. জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যখন এই প্রকল্প নেওয়া হয় তখন আমি ছিলাম না। সড়ক বিভাজনে সৌন্দয্য বর্ধনের কাজ করে ডিএনসিসি’র আরেকটি বিভাগ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই রি-প্লানটেশন হবে। মরে যাওয়া গাছের জায়গায় নতুন গাছ লাগানো হবে।

সড়ক বিভাজনের গাছগুলো মরার কারণ জানতে চাইলে ডিএনসিসিতে নবাগত বৃক্ষগল্মাদিচাষ কর্মর্কতা জিয়াউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি একেবারেই নতুন। মাস দেড়েক আগে জয়েন করেছি। এখনো কোনো কাজ গুছিয়ে উঠতে পারিনি। সুতরাং এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে হাজার গাছের প্রাণ সংহার/ছবি: আনোয়ার হোসেন রানাতবে গুলশান এভিনিউ’র সড়ক বিভাজনে কংক্রিটের দেয়াল তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, গাছগুলো ছিলো আইল্যান্ডের উপরে। আইল্যান্ডের দু’পাশের মাটি কেটে ফেলায় গাছের শেকড় কেটে গেছে। ফলে গাছগুলো মরে গেছে। যেগুলো এখনো বেঁচে আছে সেগুলোও মরে যাবে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, মেয়রের কড়া নির্দেশ রয়েছে ফুটপাত এবং সড়ক সংস্কারের সময় কোনো গাছ কাটা যাবে না। তবে সড়ক সম্প্রসারণ করতে গিয়ে কোনো গাছ কাটা পড়লে একটির জায়াগায় পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসি’র একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, চিন্তার কোনো কারণ নেই। ডিএনসিসি থেকে পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সড়ক বিভাজন সংস্কারের কাজ শেষে হলে বিউটিফিকেশনের কাজ শুরু হবে। তখন আবার সবুজবৃক্ষে শোভিত হবে গুলশান এভিনিউ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।