ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কবরে দেওয়ার জন্য একমুঠো মাটি নিয়ে গেলেন!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
কবরে দেওয়ার জন্য একমুঠো মাটি নিয়ে গেলেন! বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ইমদাদুল হক মিলন

ঢাকা: সেবার আমেরিকায় যাওয়ার সময় প্লেনের পাশের সিটে ছিলেন এক ভদ্রলোক। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। যেনতেন নন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। আলাপে আলাপে জানালেন, তিনি প্রায় চল্লিশ বছর পর দেশে এসেছিলেন। কোনো কাজে নয়, এসেছিলেন কেবল দেশটাকে দেখতে।

’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গুরুতর আহত হন। তার পা হারানোর উপক্রম হয়েছিল শত্রুসেনার গোলার আঘাতে।

কিন্তু তার আত্মীয়রা আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সারিয়ে তুলেছিলেন। দেশে বাবা-মা, ভাই-বোন যারা ছিলেন, সবাই যুদ্ধের সময়ই মারা গিয়েছিলেন। দেশে তার আর কেউ নেই।
 
বর্তমানে আমেরিকাতেই ছেলে-সন্তানাদী নিয়ে বসবাস করছেন। প্রায় চল্লিশ বছর পর তার মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো-যে দেশের জন্য জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছিলেন, সে দেশটি আসলে কেমন আছে, সেটা দেখার জন্য। শ্রেফ দেখার জন্যই এসেছিলেন। তবে তার মনের মধ্যে আরেকটি বাসনাও লুকানো ছিল। প্লেন থেকে নেমে যাওয়ার আগে তা বলেই ফেললেন।

তিনি বলেন, আসলে দেশে এসেছিলাম এক মুঠো মাটি নিয়ে যেতে। ছেলে-মেয়েদের বলেছি, আমি মারা গেলে যেন কবরে দেশের এই এক মুঠো মাটি দেয়! তাই এই এক মুঠো মাটি আমেরিকায় নিয়ে যাচ্ছি।
 
স্বনামধন্য কথা সাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন এভাবেই দেশপ্রেমিক এক নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধার কথা স্মরণ করলেন। বললেন, কে বলে দেশপ্রেম মানুষের মাঝে কমে গেছে? মোটেও কমেনি। ওই মু্ক্তিযোদ্ধার মত অনেক দেশপ্রেমিক এখনো আছে। কেননা, এদেশে যা হয়েছিল সেটা ছিল গণমানুষের যুদ্ধ। কিছু রাজাকার, আলবদর, আলশামস ছাড়া সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কাজেই এই দেশের মানুষের দেশপ্রেম কমতে পারেনা।
 
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) সিন্ডিকেট হলে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচক অনুষ্ঠানে ইমদাদুল হক মিলন এসব কথা বলেন।

প্রবাসী সাংবাদিক সাব্বির খানের লেখা ‘পোড়া মৃতদেহের রাজনীতি ও সময়ের গল্প’ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এনএসইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম, এনএসইউ’র ডেপুটি ডাইরেক্টর বেলাল আহমেদ, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
বক্তারা বলেন, চিন্তার খোরাক জুগিয়ে তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগাতে হবে। এজন্য ‘পোড়া মৃতদেহের রাজনীতি ও সময়ের গল্প’ গ্রন্থের মত আরো গ্রন্থের প্রয়োজন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
ইইউডি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।