ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

৭০ কোটি টাকার লোকসানি বাস মেরামতে ব্যয় ৩৬ কোটি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
৭০ কোটি টাকার লোকসানি বাস মেরামতে ব্যয় ৩৬ কোটি! এভাবেই নষ্ট হচ্ছে ভলভো বাসগুলো

ঢাকা: অযত্ন, অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে যাওয়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) ৫০টি বিলাসবহুল ভলভো বাস মেরামত করা হচ্ছে। আর এতে ব্যয় হচ্ছে লোকসানি গাড়িগুলোর কেনা মূল্যের অর্ধেকেরও বেশি টাকা! 

বাসগুলোর মধ্যে মাত্র একটি এখন মিরপুর থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত চলাচল করে। বাকি ৪৯টিই প্রায় আট বছর ধরে পড়ে আছে বিআরটিসি'র গাজীপুরের নাগরপাড়া সমন্বিত কেন্দ্রীয় বাস মেরামত কারখানা এবং মিরপুর ও শ্যামলী ডিপোতে।

গাড়িগুলো বিকল পড়ে থাকলেও সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হচ্ছে বিদেশি ঋণের টাকাও।  

বিআরটিসি সূত্র জানায়, এসব গাড়ি মেরামতে ৩৬ কোটি ৬২ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বিআরটিসি’র ৫০টি ভলভো দ্বিতল বাস মেরামত’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতিটি ১ কোটি ৪ লাখ টাকা মূল্যের বাস মেরামতে ব্যয় হচ্ছে ৭৪ লাখ টাকা করে। ফলে কেনা ও মেরামত মিলিয়ে এক একটির মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।  

এভাবেই নষ্ট হচ্ছে ভলভো বাসগুলোসূত্র জানায়, সরকারি তহবিল ও সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সিডা) অর্থায়নে এসব বাস কেনা হয় ১৯৯৯ সালে। প্রতিটি বাসের আসন সংখ্যা ১২০টি। বিশাল আকৃতির বাসগুলোতে আরও ৪০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। একেকটি বাস পাঁচটি মিনিবাসের সমান যাত্রী বহন করতে সক্ষম।  

প্রতিটি বাস বছরে সাত লাখ ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন ও ছয় হাজার কিলোমিটার চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০০৪ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ভালো থাকলেও প্রতিটি বাসে বছরে তিন লাখ ১৪ হাজার ৮০০ যাত্রী পরিবহন করা হয়। তবে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটারই চলেছে বাসগুলো।  

এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে বিকল হয়ে ৭ থেকে ৮ বছর আগে থেকে পরিত্যক্ত রয়েছে এসব বাস।  

সুইডেন থেকে আমদানি করা বাসগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। কিন্তু ৯/১০ বছরও চলতে পারেনি রাস্তায়।  

অভিযোগ রয়েছে, বাসগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে বরাদ্দকৃত ৯ কোটি টাকার যথাযথ ব্যবহার হয়নি। নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশ সময়মতো লাগানো হয়নি। ফলে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবেই অচল হয়ে গেছে ভলভোগুলো।  

এতে সরকারি অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি লাভের বদলে হয়েছে লোকসান। ফলে লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি।

এদিকে ডিপোগুলোতেও অকেজো বাসগুলো রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাসগুলোর নিচের অংশে লতাপাতা ও আগাছা এবং ওপরের অংশ বৃক্ষরাজিতে বন্দি। আগাছায় ঢেকে থেকে থেকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি টাকা মূল্যের বাসগুলো।  

এভাবেই নষ্ট হচ্ছে ভলভো বাসগুলোবিআরটিসি’র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভলভোগুলো ৭ থেকে ৮ বছর ধরে ডিপোতে পড়ে আছে। আমরা স্ট্যাডি করে দেখেছি, সেগুলো মেরামত করা সম্ভব। বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে মেরামত করবো। ফলে কয়েক লাখ টাকা করে ব্যয়ে মেরামত করলেই কোটি টাকা মূল্যের পরিবহন হয়ে যাবে’।  
  
তবে ডিপোতে পড়ে থাকা লোকসানি এসব বাস মেরামতের বিরোধিতা করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।  

বহুমুখী পরিবহন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এটিকে সমর্থন করি না। রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে কেন ৫০টি ভলভো একসঙ্গে কেনা হলো? প্রথমে ৫টি বাস কিনতাম। যদি সুফল পেতাম, তখনই আরও ৪৫টি কিনতাম'।  

‌‘আসলে এই উন্নতমানের বাস মেরামতের মতো ওয়ার্কশপ ও সক্ষমতা নেই বিআরটিসি’র। একসঙ্গে ৫০টি ভলভো কিনে তাই এমনিতেই বেশি টাকা নষ্ট করা হয়েছে। মেরামতেও যাচ্ছে আরও অনেক টাকা’।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
এমআইএস/এসই/পিসি/এএসআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।