শ্রীমঙ্গলের পথে নির্ধারিত সময়েই রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে হাজির হলো ‘পারাবত এক্সপ্রেস’। ট্রেনের দরজা দিয়ে হুমড়ি খেয়ে উঠতে গলদঘর্ম হয়ে সবার অভিব্যক্তি, এতো মানুষ এই কম্পার্টমেন্টে! পেছন থেকে একজন বললেন, সবাই বসতে পারবেন।
আসনে বসার পর পুরো কম্পার্টমেন্টের ভেতরে প্রায় ২০ জনের মতো দাঁড়িয়ে। তাতে তাপানুকূল পরিবেশটায় ‘তাপটা সহজেই অনুকূলে’ এলো না। ভ্যাপসা গরম সবাইকে শীতের কাপড় গুটিয়ে নিতে বাধ্য করলো। একপর্যায়ে ছাড়তে হলো ফ্যানও। আর তাপানুকূলে একটু আরাম! সেটাও যেন তখন হারাম!
তবে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রীর হাতে হলুদ রঙের টিকিট সদৃশ বস্তুটি নজরে এলে কৌতুহল বেড়ে গেলো। মনে প্রশ্ন এলো, তাহলে কি এই কম্পার্টমেন্টেও ‘স্ট্যান্ডিং টিকিট’ আছে? ওই যাত্রীর কাছ থেকে টিকিট চেয়ে দেখা গেলো এতে লেখা- ‘আসন: টিকিট নাই’। তাহলে স্ট্যান্ডিং টিকিটের এসব যাত্রী ট্রেনের কোন কম্পার্টমেন্টে নিজেকে নিরাপদ মনে করবেন? টিকিট বিক্রির আগে কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয় নিয়ে ভাবা জরুরি। স্বভাবতই যেকোনো বগিকে তিনি নিজের মনে করতেই পারেন! সঙ্গীসহ ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এ যাত্রীর কাছ থেকে টিকিটের মূল্য রাখা হয়েছে ২৯০ টাকা।
এর মাঝে হুমড়ি খেয়ে এক যাত্রী এসে আসনে বসা এক নারী যাত্রীকে উঠিয়ে দিতে চাইলেন, দাবি করলেন এটা তার কেনা আসন। তবে ওই আসনটি যারা নিয়েছিলেন তাদের তোপে কিছুটা বিব্রত হয়ে বললেন, এ কম্পার্টমেন্টে দায়িত্বরত ব্যক্তি বলেছেন আসনটি খালি। টিটিকে ডেকে পাঠিয়ে বোঝা গেলো ‘উপরি’ হিসেবে হরহামেশাই তিনি এ কাজ করেন। এ বগিতেও এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
এসব বিষয়ে ট্রেনের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বাকি বগিগুলো পাড়ি দিতে বেশ বেগ পেতো হলো। কারণ পারাবতের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে যাত্রী ঠাঁই নেননি। সেখান থেকে বাদ যায়নি নামাজের ঘর, পাওয়ার কারও।
তাপানুকূল কম্পার্টমেন্টে দাঁড়ানো যাত্রীর বিষয়ে পরিচালক জাহিদুল হক বলেন, “এমন তো নিয়ম নেই। বিষয়টি তো কম্পার্টমেন্টের দায়িত্বরত ব্যক্তির দেখার কথা। ”
তবে স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের এ কম্পার্টমেন্টে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে না পারা পরিচালক জনবল সংকটকেই দায়ী করলেন। একইসঙ্গে জোর দিলেন মানুষের সচেতনতার ওপর।
ওই কম্পার্টমেন্টে দায়িত্বরত সেলিম এ বিষয়ে বললেন, “যাত্রীদের বলা হয়েছে। কিন্তু কী করবো? সামনের স্টেশনে নেমে যাবে। চেষ্টা করি। তাছাড়া শুক্রবার হওয়ায় যাত্রীর চাপ বেশি। ”
সামনে নেমে যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি পাশ কেটে গেলেও ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীর দীর্ঘশ্বাস সরে না স্টেশনের পর স্টেশন। বুঝি এটাই ট্রেনের ‘তাপানুকূল’ কম্পার্টমেন্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
জেডএস/এইচএ/