ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হারিয়ে যাচ্ছে মানিকগঞ্জের হাজারি গুড়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
হারিয়ে যাচ্ছে মানিকগঞ্জের হাজারি গুড় মানিকগঞ্জে কমছে হাজারি গুড় তৈরি-ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: অসাধু কিছু গুড় ব্যবসায়ীর আধিপত্য এবং নির্বিচারে খেজুর গাছ কেটে ফেলার কারণে দিন দিন কমছে মানিকগঞ্জের প্রায় দুইশ’ বছরের ঐহিত্যবাহী হাজারি গুড়।

এক সময় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার প্রায় শতাধিক গাছি হাজারি গুড় উৎপাদন করতেন। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ থেকে ১৫ জনে।

মানিকগঞ্জের হাজারি গুড়ের কদর রয়েছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকার গাছি মিনহাজ হাজারির নাম অনুসারে ওই গুড়ের নাম হয়েছে হাজারি গুড়। উপহার হিসেবে হাজারি গুড় পেয়ে ইংল্যান্ডের রানীও এর প্রশংসা করেছিলেন বলে কথিত রয়েছে।

কিন্তু দেশ ও দেশের বাইরে ঐতিহ্যবাহী এই গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে কিছু অসাধু গুড় ব্যবসায়ী ও গাছি রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। এ কারণে হারাতে বসেছে হাজারি গুড়ের ঐতিহ্য। মানিকগঞ্জে কমছে হাজারি গুড় তৈরি-ছবি: বাংলানিউজঅপরদিকে, জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলো উচ্চ মূল্যে এসব এলাকার খেজুর গাছ কেনায় দিন দিন কমছে খেজুর গাছ।

শীত শুরু হওয়ার পরপরই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নেন জেলার প্রায় শতাধিক গাছি। তবে খেজুর গুড় তৈরির সঙ্গে শতাধিক গাছি জড়িত থাকলেও হাজারি গুড় উৎপাদন করেন হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকার মাত্র ১২ থেকে ১৫টি পরিবার।

প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধায় ব্যস্ত থাকেন এই এলাকার গাছিরা। এরপর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে হাঁড়ি থেকে সংগ্রহ করেন খেজুরের রস। সেই রস জাল দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ার উৎপাদন করেন হাজারি গুড়। পাঁচ থেকে সাত লিটার রস জ্বালালে মাত্র এক কেজি গুড় তৈরি হয় বলে জানান একাধিক গাছি। মানিকগঞ্জে কমছে হাজারি গুড় তৈরি-ছবি: বাংলানিউজঝিটকা এলাকার গাছি আব্দুস সালাম (৫৫) বাংলানিউজকে জানান, এ বছর তিনি প্রায় ১০০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। নিজের খেজুর গাছ কম থাকায় অন্যের গাছ থেকেও রস সংগ্রহ করেন তিনি। অন্যের গাছ থেকে সংগ্রহ করা রসের অর্ধেক পরিমাণ দিতে হয় গাছের মালিককে। সব মিলিয়ে তিনি প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লিটার রস পেয়ে থাকেন। এতে করে তিনি প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কেজি গুড় তৈরি করেন। প্রতি কেজি গুড়ের বর্তমান বাজার ধর ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

একই এলাকার সিদ্দিক মিয়া জানান, গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে হাজারি গুড় তৈরি করা তাদের চার পুরুষের পেশা। তবে এক সময়ে এই পেশার সুদিন থাকলেও এখন খুব দুর্দিন। যার প্রধান কারণ আগের চেয়ে খেজুর গাছ কমে যাওয়া।
 
এখন শুধুমাত্র মাত্র বাপ-দাদার পেশা বলেই নামেমাত্র তিনি এই পেশায় রয়েছেন বলেও জানান। মানিকগঞ্জে কমছে হাজারি গুড় তৈরি-ছবি: বাংলানিউজহরিরামপুর উপজেলার আব্দুল লতিফের ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রউফ জানান, পেশাগত কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে হয় তাকে। বিশ্ব দরবারে তাদের উপজেলার এই হাজারি গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

ঝিটকা গাছিবাড়ি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে জানান, ঝিটকার ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়ের ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে আমাদেরও ভেজাল গুড় তৈরি ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ এবং বাড়ির আঙিনা ও আশেপাশের পতিত জমিতে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।