স্থানীয়রা বলছেন, আলুবাজারের প্রতিটি বাসিন্দা এখন আতঙ্কে রয়েছেন। কারখানাগুলো এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া না হলে এ আতঙ্ক তাদের মন থেকে যাবে না।
এর আগে, ২৫ জানুয়ারি (বুধবার) দিনগত রাত ২টার দিকে আলুবাজার এলাকার একটি জুতার কারখানায় আগুন লাগে। এ ঘটনায় ওই কারখানার তিন শ্রমিক দগ্ধ হন। পরে আল আমিন (২০) নামে কারখানার এক কারিগর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওসমান (২৫) ও আবদুস সামাদ (২৭) নামে দুই কারিগর ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আলুবাজারের ওই কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জুতার কারখানাটি বাইরে থেকে তালা লাগানো। ভবনের পেছন দিকের জানালা দিয়ে দেখা গেছে, বেশকিছু কেমিক্যালের বোতল পড়ে আছে। ভবনের আশপাশে রয়েছে এখনও পোড়া গন্ধ।
আলুবাজার ছোট মসজিদের পেছনে সরু রাস্তা দিয়ে একটু সামনে গেলেই ৫৫/১-এ পাঁচতলা ওই ভবনটি। ভবনের মালিকের নাম রনি। নিচতলার তিনটি রুম ভাড়া নিয়ে ইয়াকুব শেখ গড়ে তোলেন কারখানা। কাঠের পাটাতন দিয়ে ঘরের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে দুইতলা। ওপরে জুতা তৈরির কাজ চলে, আর নিচের অংশটি কারিগরদের বিশ্রামের জন্য। আগুনে নিচতলার একটি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
এদিকে, ভবনের দুই পাশে রয়েছে দু’টি বৈদ্যুতিক খুঁটি। আগুনের তাপে ওই খুঁটিগুলিও কালো হয়ে গেছে। রাস্তার পাশের জানালার কাঁচগুলো আগুনের তাপে ফেটে গেছে।
ওই এলাকায় আরেক জুতার কারখানার মালিক মো. লোকমান বাংলানিউজকে জানান, আলুবাজারের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জুতার কারখানা আছে। আর এসব জুতা তৈরির জন্য সল্যুসন গামসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যেখানে জুতার কারখানা থাকবে সেখানে কেমিক্যাল ব্যবহার হবে, এটাই স্বাভাবিক।
ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের অন্য জুতার কারখানার কারিগর মো. মিশু বাংলানিউজকে বলেন, এসব কারখানাগুলোতে প্রায় সময় এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এই মাসেই বংশালে দু’টি কারখানায় আগুন লাগে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটিতে কিভাবে আগুন লেগেছে তা জানি না। তবে কারখানায় জুতা তৈরিতে ব্যবহৃত সল্যুসন আঠা আর কেমিক্যালের কারণে আগুন বেড়ে যায়। ওইদিন সেখানে অন্তত ১৫ জনের মতো কারিগর ছিল।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরে বংশালের সাতরওজা এলাকায় একটি জুতার কারখানায় আগুন লেগে দুই শ্রমিক দগ্ধসহ তিনজন আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এসব এলাকায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ড কেন ঘটে?- জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মদ খান বাংলানিউজকে বলেন, আবাসিক এলাকায় কোনো কারখানা থাকার নিয়ম নেই। আবাসিক এলাকায় এসব জুতার কারখানা থাকলে ঝুঁকি থাকবেই, কমবে না। ঝুঁকি এড়াতে এসব কারখানা সরিয়ে নিতে হবে।
এসব জুতার কারখানায় যে সল্যুসন ও পেস্টিং ব্যবহার করা হয় সেগুলো দাহ্য পদার্থ। আগুলে পুড়লে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষ দ্রুত মারা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বংশ পরম্পরায় পুরান ঢাকার বংশালে এসব জুতার কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানা সরানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তাই এ বিষয়ে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে ফাসার সার্ভিসের আলোচনা করার কথা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সরানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
এসজেএ/আরআর/এসএইচ