ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

৩৫ বছরের আশ্রয়স্থলে মরার স্বাদ পূরণ হলো না সালেহার!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
৩৫ বছরের আশ্রয়স্থলে মরার স্বাদ পূরণ হলো না সালেহার! সালেহা ও তার শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্বামী/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গুলশান লেকের ঝিলপাড়। টং ঘরের সামনে পঞ্চাশোর্ধ্ব বৃদ্ধা সালেহা বস্তায় জিনিস ভরছিলেন। তাকে সাহায্য করছিলেন একই বয়সী আরেক বৃদ্ধ।

৩৫ বছর আগে বন্যায় সহায় সম্বলহীন হারিয়ে কুমিল্লার হাইমচর থেকে স্বামীর হাত ধরে রাজধানীতে আসেন সালেহা। বসতি গড়েন গুলশান লেকের ধারে।

কিন্তু, অবৈধ স্থাপনার দায়ে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের এ আশ্রয়স্থল ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে তাকে।

কপালে ভাঁজ পরা সালেহার চোখে-মুখে তাই দুশ্চিন্তার ছাপ।

একটা সময় মনে করেছিলেন, এটিই তার ভিটা-মাটি। এখানেই তার একমাত্র সন্তানের জন্ম। তাই, এখানে শুয়ে মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নেবেন বলেও স্বপ্ন দেখতেন সালেহা।

চলতি মাসে গুলশান লেক এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় রাজউক। অনেক মিনতি করার পর সোমবার (৩০ জানুয়ারি) পর্যন্ত সময় পেয়েছেন ছালেহা। যা সম্বল আছে, তা নিয়েই এরপর থেকে রাত যাপন করবেন কোনো এক রাস্তার ফুটপাতে।

সহায় সম্বলহীন রাজধানীতে আশ্রয় নেওয়া সালেহা/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসালেহার মেয়ে নোয়াখালীতে স্বামীর ঘরে সংসারী হয়েছেন। শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কোনো কাজ করেন না। তাদের পুরো ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সালেহার। গুলশান লেক ছেড়ে গেলে কোথায় থাকবেন কি করবেন- এসব ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছেন না তিনি।

গুলশান লেকের ধারে যে সময় বসতি গড়েছিলেন সালেহা, তখন এ অঞ্চল ছিলো পুরো ধানক্ষেত আর ঝিল। সে সময় এতো উঁচু উঁচু দালান-কোঠা একটিও ছিলো না। আর তার মতো হাজার হাজার সম্বলহীন মানুষ ধানক্ষেতের পাশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বারবার উচ্ছেদের কারণে চলে গেছেন। যারা একবারেই নিরুপায় তারাই রয়ে গেছেন। তাদের সবাইকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ছাড়ার নোটিশ দেওয়‍া হয়েছে।

সালেহা বলেন, ‘কুমিল্লায় আমার বেটা (স্বামী) বড়লোক আছিলো, বানে সব খাইছে। এখন বোতল টোকায় জীবন চলে। ভাবতেও পারি নাই, এ জায়গা আমাগো ছাড়তে হইবে’।

‘বহুদিন থাকি এখানে মাথা গোঁজা ঠাঁই আছিলো। আর দেশতো (গ্রামের বাড়ি) কিছু নাই, এখানে মরবার ইচ্ছাও আছিলো, তা আর হচ্ছে না’- কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ছালেহা।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
এমসি/ওএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।