৩৫ বছর আগে বন্যায় সহায় সম্বলহীন হারিয়ে কুমিল্লার হাইমচর থেকে স্বামীর হাত ধরে রাজধানীতে আসেন সালেহা। বসতি গড়েন গুলশান লেকের ধারে।
কপালে ভাঁজ পরা সালেহার চোখে-মুখে তাই দুশ্চিন্তার ছাপ।
একটা সময় মনে করেছিলেন, এটিই তার ভিটা-মাটি। এখানেই তার একমাত্র সন্তানের জন্ম। তাই, এখানে শুয়ে মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নেবেন বলেও স্বপ্ন দেখতেন সালেহা।
চলতি মাসে গুলশান লেক এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় রাজউক। অনেক মিনতি করার পর সোমবার (৩০ জানুয়ারি) পর্যন্ত সময় পেয়েছেন ছালেহা। যা সম্বল আছে, তা নিয়েই এরপর থেকে রাত যাপন করবেন কোনো এক রাস্তার ফুটপাতে।
সালেহার মেয়ে নোয়াখালীতে স্বামীর ঘরে সংসারী হয়েছেন। শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কোনো কাজ করেন না। তাদের পুরো ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সালেহার। গুলশান লেক ছেড়ে গেলে কোথায় থাকবেন কি করবেন- এসব ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছেন না তিনি।
গুলশান লেকের ধারে যে সময় বসতি গড়েছিলেন সালেহা, তখন এ অঞ্চল ছিলো পুরো ধানক্ষেত আর ঝিল। সে সময় এতো উঁচু উঁচু দালান-কোঠা একটিও ছিলো না। আর তার মতো হাজার হাজার সম্বলহীন মানুষ ধানক্ষেতের পাশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বারবার উচ্ছেদের কারণে চলে গেছেন। যারা একবারেই নিরুপায় তারাই রয়ে গেছেন। তাদের সবাইকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সালেহা বলেন, ‘কুমিল্লায় আমার বেটা (স্বামী) বড়লোক আছিলো, বানে সব খাইছে। এখন বোতল টোকায় জীবন চলে। ভাবতেও পারি নাই, এ জায়গা আমাগো ছাড়তে হইবে’।
‘বহুদিন থাকি এখানে মাথা গোঁজা ঠাঁই আছিলো। আর দেশতো (গ্রামের বাড়ি) কিছু নাই, এখানে মরবার ইচ্ছাও আছিলো, তা আর হচ্ছে না’- কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ছালেহা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
এমসি/ওএইচ/এএসআর