মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এবং সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘আরাকান রাজ্যের মংডু এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট অস্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে মায়ানমারের প্রায় ৬৫ হাজার রাখাইন মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিক বিধি বহির্ভূতভাবে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে’।
‘তারা কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে টেকনাফ ও উখিয়ার নয়াপাড়া, লেদা ও কুতুপালং-এর নিবন্ধিত ক্যাম্পে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছে’ বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
‘তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক শরণার্থী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে’।
চিঠিতে বলা হয়, ‘ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে মায়ানমারের অগণিত নাগরিক অবৈধভাবে প্রবেশ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার, স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে’।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) পাঠানো চিঠিতে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে চট্টগ্রাম বিভাগ ও এ বিভাগের তিন জেলার জন্য কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে কমিটি এবং অন্যান্য জেলায় সীমিত আকারে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গত ০৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে সভায় ‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মায়ানমারের নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার, বিজিবির রিজিওনাল কমান্ডার, ডিআইজি, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, ডিজিএফআই’র বিভাগীয় প্রধান, কোস্টগার্ডের জোনাল কমান্ডার, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-বান্দরবানের জেলা প্রশাসক, আনসার ও ভিডিপির পরিচালক এবং আঞ্চলিক বন সংরক্ষক। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
বিভাগীয় কমিটি মায়ানমারের নাগরিকদের চিহ্নিতকরণে জেলা কমিটিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবে।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটিতে পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, বিজিবির সেক্টর কমান্ডারের প্রতিনিধি বা কমান্ডিং অফিসার, ডিজিএফআই’র কর্নেল জিএস, এনএসআই’র যুগ্ম বা উপ-পরিচালক, আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ডার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা কমিটিকে সর্বস্তরের প্রতিনিধি নিয়ে মায়ানমারের নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ, জনসাধারণ ও গোয়েন্দাদের দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রেবশকারী মায়ানমারের নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ এবং জনগণের সহযোগিতায় তারা যাতে মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যেতে না পারে- সে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তা এবং চিহ্নিত শরণার্থীরা নির্ধারিত এলাকার বাইরে যেতে চাইলে তাদের গ্রেফতার বা ক্যাম্প এলাকায় পুশ করতেও বলা হয়েছে জেলা কমিটিকে।
জেলা কমিটিগুলোকে মায়ানমার থেকে আসা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শরণার্থীদের পর্যায়ক্রমে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠ্যাঙ্গারচরে স্থানান্তরে সহায়তা করতে বলা হয়।
এছাড়া মায়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী শরণার্থীদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি ও পররাষ্ট সচিবের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্সকে সহযোগিতা এবং উপজেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স বা উপজেলা কমিটির কার্যক্রম সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে পার্বত্য তিন জেলার কমিটির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অন্য জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জেলা কমিটিকে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুসারে, ইউএনও উপজেলা কমিটির সভাপতি, মেয়র সংশ্লিষ্ট পৌরসভা কমিটির সভাপতি, ওয়ার্ড কমিশনার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
এমআইএইচ/এএসআর