বেনাপোল থেকে চার কিলোমিটার দূরে এই আমড়াখালী বিজিবি তল্লাশি ফাঁড়ি। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের অভিযোগ, সেখানে প্রতিটি যাত্রীবাহী বাস দাঁড় করিয়ে বক্স থেকে ব্যাগ-বাক্স বের করে শুরু হয় তন্ন তন্ন করে তল্লাশি।
প্রতিদিন গড়ে আট হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ভ্রমণে যান। অধিকাংশই আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আর বাকিরা চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য যাতায়াত করে থাকেন।
কিন্তু দেশে ফেরার পথে ভ্রমণের আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়। কেননা, আপনজনদের জন্য আনা উপহার সঙ্গে থাকলে তল্লাশির নামে বিব্রতকর জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানির মুখে পড়তে হয় যাত্রীদের।
পাসপোর্টধারী যাত্রীরা জানান, দেশে ফেরার পথে সবাইকে প্রথমে ভারতের হরিদাসপুর চেকপোস্টে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সেরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে উভয় দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তল্লাশির মুখে পড়তে হয়।
এরপর দেশে ঢোকার পথে বেনাপোল সীমান্ত চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হয়ে পাসপোর্ট বইয়ে সিল মারার পর কাস্টমসে ব্যাগ তল্লাশির কাজ সমাধা করতে হয়।
ইমিগ্রেশন-কাস্টমস্ ভবন থেকে বাইরে বের হলে রাস্তায় ফের বিজিবি সদস্যরা পাসপোর্টধারী যাত্রীদের বই দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এরপর যাত্রীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরসহ যার যার গন্তব্যের বাসে গিয়ে ওঠেন। উন্মুখ হয়ে থাকেন কখন আপনজনদের সান্নিধ্যে দ্রুত গিয়ে ভালোবাসার উপহারগুলো তুলে দেবেন।
কিন্তু চরম বিড়ম্বনায় গিয়ে পড়েন আমড়াখালী বিজিবি তল্লাশি ফাঁড়িতে গিয়ে। অথচ এর আগেই পাসপোর্টধারী যাত্রীদের দু’দেশের সীমান্তে অন্তত: আটবার নানা প্রশ্ন ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তল্লাশির মুখোমুখি হয়ে আসতে হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, কোনো পুরুষ যাত্রী যদি তার স্ত্রী, মা, বোনের জন্য ২/৩টি করে শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না, চুড়ি, লিপস্টিক, সাবানসহ কোনো প্রসাধন সামগ্রী সঙ্গে রাখেন, তাহলে তার সহজে নিষ্কৃতি মেলা ভার। কেন তিনি পুরুষ হয়ে এসব আনলেন?
আবার কোনো নারী যাত্রী যদি স্বামী-বাবা-ভাই বা আপনজনদের জন্য জামা-প্যান্ট, গেঞ্জি বা কাপড়ের পিস সঙ্গে করে ফেরেন, তাকেও একইভাবে বিব্রতকর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়।
অবস্থাটা এমনই যেন, তাদের ভারত যাওয়া-আসাটাই অপরাধ হয়ে গেছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, ব্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকেও বাস থেকে নামতে হয়। এরপর খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ব্যাগের তালা খুলে তল্লাশি কাজে সহায়তা করতে বাধ্য হন তারা। অবৈধ পণ্য তো মেলেই না, শুধু শুধু বিরক্তি বাড়ে। সময় যতো গড়ায়, দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তিও ততোই বাড়তে থাকে। এ নিয়ে কোনো কথা বলতে গেলে হয়রানির মাত্রাও বাড়ে।
এমন আচরণে চরম বিরক্ত হতে দেখা যায় ভারতীয় পর্যটকদেরও। এমনিতেই তাদের বাংলাদেশ ভ্রমণে এসে ৫০০ টাকা ভ্রমণ ট্যাক্স গুণতে হয়। অথচ ভারত ভ্রমণে গেলে সে দেশের সরকার ভারত বা বাংলাদেশের যাত্রীদের জন্য কোনো ভ্রমণ ট্যাক্স আরোপ করেনি।
যাত্রীদের প্রশ্ন, বিজিবি যদি খুঁটে খুঁটে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সব ব্যাগ খুলে অবৈধ পণ্যের নামে তল্লাশি করে, তবে সীমান্তে আর কাস্টমস্ থাকার প্রয়োজন কি?
এভাবে আমড়াখালী বিজিবি তল্লাশি ফাঁড়িতে ব্যয় হয়ে যায় আধা ঘণ্টা থেকে একঘণ্টা। এরপর পথে পথে যানজট এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নিত্যদিনের যানজট তো লেগেই আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭
এসএস/এএসআর