এছাড়া, গাড়িতে ছোটখাটো ত্রুটি পাওয়া গেলে তা পার পাওয়া যায় টাকার বিনিময়ে। গাড়ির মালিকরা জানান, দালাল ধরে টাকা না দিলে গাড়ির সব ঠিক থাকলেও ছোটখাট ত্রুটি বের করা হয়।
সম্প্রতি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে বিআরটিএ’র মিরপুর কার্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দেখা গেছে, বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে খুব সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করে দালালরা। টাকার বিনিময়ে বিআরটিএ’র অসাধু কর্মকর্তা ও গাড়ির মালিকদের মধ্যে মধ্যস্থতার কাজ করে থাকেন তারা।
এদিন দেখা যায়, বিআরটিএ’র খানিকটা দূরে রাস্তার দুই দিক থেকে যে সব গাড়ি আসতে থাকে, সেগুলোকে হাত উঁচিয়ে ইশারা দিচ্ছেন তারা। এসব গাড়ির বেশিরভাগই এসেছে ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য। চালক গাড়ি থামানোর সাথে সাথেই চলতে থাকে দরকষাকষি। সিরিয়াল ছাড়া কোন ঝামেলা ছাড়াই ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে টাকা দাবি করেন তারা। সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে সুযোগ বুঝে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তারা।
ফিটনেস টেস্ট করিয়ে গাড়ি নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছেন চালক সোহাগ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গাড়ির সবই ঠিক আছে, শেষে বলে বাম্পার বাঁকা। পরে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে এক দালালের সাথে রফাদফা হয়েছে। দালাল না ধরলে কোন না কোন সমস্যা খুঁজে বের করেই তারা। দালালকে টাকা দিলে সব ঠিক।
লতিফ মিয়াজী নামে এক চালক এসেছেন তার ট্রাকের ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে। গাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, গাড়ি আনি নাই। গাড়ি ছাড়া ফিটনেস টেস্ট কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব হয়, দেহেন কেমনে হয়। ’ ঘণ্টাখানেক পর লতিফ জানান, সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা চেয়েছেন দালাল। তাতে তিনি রাজি কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পুরো টাকাটাই অগ্রিম চেয়েছেন ওই দালাল। লতিফ চাচ্ছেন আগে কাজ পরে টাকা। সেজন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন।
গাড়ি ছাড়াই ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েছে সাদেকুরের সিএনজি অটোরিকশা। প্রথমে সিএনজি কোথায় জানতে চাইলে বাইরে রেখেছেন বলে জানান তিনি। পরে কথা প্রসঙ্গে স্বীকার করলেন, গাড়ি আনি নাই। আড়াই হাজার টাকা দিছি দালালরে হেয় কইরা দিছে সব।
ফিটনেস টেস্টের শেষে বিআরটিএ’র যে কর্মকর্তা কাগজে স্বাক্ষর করছেন সেটা এগিয়ে দিচ্ছেন আনসার কর্মী সগীর। এজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০-১০০ করে টাকা নেন। তার ভাষায়, খুশি হয়ে তারা চা খেতে দেয়।
তার কাছে এই দালালচক্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় নেতাদের একটা প্রভাব আছে এখানে, তারা কিছু কাজ পান। তারাই এই চক্রের লিডার।
তারা কারা জানতে চাইলে প্রথমে জানেন না বলতে চাইলেও একপর্যায়ে তিনি বলেন, শাহীন আর তানজীল এসব নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বিষয়ে জানতে উপ-পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাসুদ আলমের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ‘ব্যস্ত আছি, পরে ফোন দেব’ বলেন তিনি। কিন্তু পরে চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
গত ১৮ জানুয়ারি মিরপুর বিআরটিএ’র কার্যালয় পরিদর্শনে এসে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মাসুদ আলমকে বলেন, ‘গাড়ি থাকে বাসায়, আর সেই গাড়ির ফিটনেস রিপোর্ট এমনি এমনি চলে যায়, তাই না? এসব কিন্তু চলবে না।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আগে পরিদর্শনে আসার সময় দেখতাম, দালালরা দেখেই দৌড়ে পালাতো, কিন্তু এবার এমন চিত্র নেই। তবে এখনও দালালদের দৌরাত্ম্য আছে। আমার আসার খবর আগেই পেয়েছে, তাই সবাই কেটে পড়েছে। বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসূত্র রেখেই দালালরা কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭
পিএম/আরআই