বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে সুশৃঙ্খল হবে যানবাহন, যানজটমুক্ত হবে ঢাকা।
এ পদ্ধতিতে একটির পর একটি গণপরিবহন সিডিউল অনুসারে নির্ধারিত স্টপেজে আসবে ও ছেড়ে যাবে।
আগামী ৮/৯ মাসের মধ্যে পদ্ধতিটি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকাকে এ থেকে এফ পর্যন্ত ৬টি জোনে ভাগ করা হবে। প্রতিটি জোনে একই রঙের গাড়ি চলাচল করবে। এক জোনে নির্দিষ্ট রঙের ছাড়া অন্য জোনের গাড়ি চলতে পারবে না।
রাজধানীজুড়ে দুই শতাধিক কোম্পানির বাস চলাচল করে। সবগুলোকে ৭টি কোম্পানির আওতায় আনা হবে। এসব কোম্পানি চলবে নির্দিষ্ট সংগঠনের অধীনে। সকল বাসের আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে সংগঠনগুলো। যাত্রীদের জন্য স্মার্ট টিকিট বা ই-টিকিটিং সেবা চালু করা হবে। সবাই কার্ডের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করবেন, কোনো আর্থিক লেনদেন হবে না।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউলুপের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রিং-রোড পদ্ধতি চালু করে নদীগুলোকে ব্যবহার করা হবে।
বাইরের কোনো গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করবে না। কেউ আশুলিয়া থেকে গুলিস্তান বা সদরঘাট যেতে চাইলে তিনি একটিমাত্র টিকিট কিনবেন। একই টিকিটে গাবতলীতে এসে বাস পরিবর্তন করে আরেকটিতে উঠবেন, নতুন টিকিট নিতে হবে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সচিব মো. শওকত আলী বাংলানিউজকে জানান, এ পদ্ধতি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব মেয়রকে দেন। এরপর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে তারা একটা রোডম্যাপ তৈরি করেন। সে অনুসারে কার্যক্রম ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খূব শিগগিরই এর বাস্তবায়ন দেখা যাবে।
প্রকল্পের কনসালট্যান্ট পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো বাতিলেরও প্রস্তাব দিয়েছি। ২০১২ সালের পরে যেসব গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে, শুধুমাত্র সেগুলোকে চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। এর আগের বাসগুলোর মধ্যে ভালো কন্ডিশনেরগুলোকে সার্ভিসিং করে স্কুলবাস এবং সরকারি কর্মচারী ও পুলিশের কাজে লাগাতে হবে। এর ফলে যেসব কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি তাদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে’।
তিনি আরো বলেন, ‘মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়ে ইন্টারডিস্ট্রিক্ট ওয়ার্কশপ, পার্কিং ও ড্রাইভারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন’।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএএন সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, রোডম্যাপ অনুসারে সমগ্র ঢাকাকে ৬টি জোনে ভাগ করে কোন কোম্পানির বাস কোন জোনে চলবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে সিটি কর্পোরেশন। পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়রের নেতৃত্বে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যেই টার্মিনাল ও সার্ভিসিং গ্যারেজ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেছি, ই-টিকিটিংয়ের কাজ চলছে। বেশকিছু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি, তারা সব পরিকল্পনার সঙ্গে একমত’।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. রুস্তম আলী খাঁন বলেন, ‘মেয়র আমাদের মহাসচিবকে ডেকেছিলেন। বাস মালিকদের স্বার্থরক্ষা করে যদি দেশ ও জনগণের কল্যাণ হয়, তাহলে আমরা যেকোনো সহায়তা দেবো’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭
এএম/এএসআর