বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ-তারাকান্দি-দেওয়ানগঞ্জ’ রুটের অন্যতম গফরগাঁও রেলস্টেশন। আশেপাশের আর কোনো স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেন না থামার কারণে এবং এই এলাকার সড়ক যোগাযোগ ভাল না থাকায় গফরগাঁওয়ের মানুষের পাশাপাশি ত্রিশাল, নান্দাইল, হোসেনপুর উপজেলা থেকেও অনেকে এই রেলস্টেশন দিয়ে ঢাকা ও বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে থাকেন।
জানা যায়, গত দুই-তিন মাস আগে এই এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় কয়েকজনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু পরে তারা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত হয়।
সূত্র জানায়, গফরগাঁও রেলস্টেশনে সরকারি বা বেসরকারি সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে পাওয়া যায়। বেসরকারি ট্রেনের ক্ষেত্রে টিকিট বিক্রির সঙ্গে যুক্ত একটি সিন্ডিকেট এ কাজ করে। যারা প্রথমেই কালোবাজারিদের হাতে টিকিট দিয়ে সাধারণ যাত্রীদের আসনশূন্য টিকিট দেয়।
অপরদিকে সরকারি আন্তঃনগর ট্রেনের ক্ষেত্রে গফরগাঁও ও ময়মনসিংহ স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে কর্তব্যরত কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে কালোবাজারিদের হাতে টিকিট পৌঁছায়। এক্ষেত্রে গফরগাঁও এলাকার একটি সিন্ডিকেট কাজ করে। তারা তাদের সহযোগীদের দিয়ে কাউন্টারের সামনে ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা বা তার কিছু সময় আগে যাত্রীদের ডেকে ডেকে টিকিট বিক্রি করান।
সূত্র আরও জানায়, এই সিন্ডিকেটে যারা কাজ করে তাদের প্রায় সবাই সরকারি দলের সমর্থক, তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কিছু বলা হয় না।
সরেজমিনে দেখা যায়, গফরগাঁও থেকে ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া ১০৫ টাকা কিন্তু সাধারণ যাত্রীরা কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে কালোবাজারিদের কাছ থেকে তিনগুণ বা কখনো কখনো চারগুণ বেশি দামে টিকিট কিনছেন। আবার হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া ৮০ টাকা কিন্তু ওই চক্রটি এই টিকিট ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করছেন। একইভাবে তারা সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর ফলে যাত্রীরা নির্ধারিত টিকিট কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকে কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে বিনাটিকিটে পাড়ি দিচ্ছেন নিজ গন্তব্যে। ফলে এ খাত থেকে সরকার প্রতিনিয়ত হারাচ্ছে রাজস্ব।
নান্দাইলের খারুয়া থেকে আসা ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেসের যাত্রী খায়রুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করলে সময় কম লাগায় ট্রেনেই সবসময় যাতায়াত করি। কিন্তু কাউন্টারে টিকিট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারির কাছে সবসময় টিকিট পাওয়া যায়। দুই-তিনগুণ বেশি দামে তাদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে হয়। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।
ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের ছাত্র রাফিফ আহসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, কাউন্টার থেকে কখনই আসনযুক্ত টিকিট পাওয়া যায় না। প্রায় সব টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে যায়। প্রশাসন সব জানলেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে গফরগাঁও স্টেশন মাস্টার মুসলেম উদ্দিনের সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয়ে দেখা করতে চাইলে তিনি দুপুর ২টার পর দেখা করতে বলেন। কিন্তু ২টার সময় স্টেশনে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭
ডিআর/জিপি/আরআই