দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার পরিবর্তে ভোগান্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতির মাত্রা। ফলে, জনগণকে সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এজন্য চলতি মাসে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রতিরোধে দু’দফায় দুদকের ১৩ জন পরিচালকের সমন্বয়ে ১৯টি প্রাতিষ্ঠানিক বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। যাদের কাজ হচ্ছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতির উৎস খুঁজে বের করা এবং কিভাবে দুর্নীতি হচ্ছে, সেটি পর্যবেক্ষণ করা।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি কাজের একটি সিস্টেম রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও সে সিস্টেমের মধ্যে কাজ করার কথা। কিন্তু সেই সিস্টেম অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি-না কিংবা জনসেবার পরিবর্তে দুর্নীতি হচ্ছে কি-না সেটি দেখার বিষয়। যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতি হয়, তাহলে তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির তথ্য বের করতে অভিযানে যাচ্ছে দুদক।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুর্নীতির উৎস খুঁজতে তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছেন টিমগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে: ওয়াসা, বাংলাদেশ বিমান ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের দল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় ‘বলাকা’য়, পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে এবং কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী ও আতিকুর রহমানসহ চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এসব অভিযান চালান।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কার্যালয়ে অভিযান চালান দুদকের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের দল।
২০১২ সালে সরকারের ১১টি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি অনুসন্ধান ও প্রতিরোধে ১১ জন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে ১১টি বিশেষ টিম গঠন করেছিল দুদক। সে সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), ঢাকা সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর, সরকারি আবাসন পরিদফতর, সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয়। অনেকগুলো মামলাও করেন দুদকের টিমগুলো।
কিন্তু পরবর্তীতে টিমগুলো সম্পর্কে নানা অভিযোগ উঠলে প্রাতিষ্ঠানিক দলগুলো ভেঙে দেয় দুদক।
এরপর ২০১৫ সালে দু’জন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে দু’টি আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করে দুদক। কিন্তু টাস্কফোর্স দু’টিও আলোর মুখ দেখতে পারেনি।
এছাড়া গত বছরের ১৫ মে দুদকের পাঁচজন পরিচালকের নেতৃত্বে রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে নজরদারির জন্য পাঁচটি বিশেষ প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে দুদক। টিমগুলো এখনও চলমান।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে দুদকের কাজের গতি অনেক বেড়েছে। কিন্তু এই গতি চলমান থাকবে কি-না, সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা, বিভিন্ন সময়ে দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে কাজ করতে গেলে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই বলে ভেঙে পড়লে হবে না’।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭
এসজে/আরআর/পিসি/এএসআর