তারপরও ভ্রমণের স্বাদ তেতো হয়ে গেলো ট্রেনের যাত্রী শফিকুল ইসলামের।
কারণ সকালের নাস্তা শেষে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে যখন তিনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন, ঠিক তখনই শুনলেন খাবারের গলাকাটা দাম।
মঙ্গলবারের (৩১ জানুয়ারি) সিল্কসিটি ট্রেনের এক্সটা বগির চিত্র ছিলো এমন।
ক্ষোভের কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আরে ভাই এইটা একটা কথা হলো, সামান্য জেলি দিয়ে দুই পিস পাউরুটি, একটা আধা সেদ্ধ চিকেন ফ্রাই আর এক চিলতে কাটলেটের দাম কী এত হয় বলেন? নাশতার প্লেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে এখন গলাকাটা দাম চাইছে তারা’।
চলন্ত ট্রেনে হাঁটতে গিয়ে বিভিন্ন পাশ থেকে ট্রেনের খাবারের দাম ও মান নিয়ে এমনই তিক্ততার কথা শোনা গেলো যাত্রীদের মুখে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পার হলেও এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস নামে এই আন্তঃনগর ট্রেনে। খাবারে দাম নিয়ে অরাজকতা চলছে এই রুটের অন্য আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতেও।
ট্রেনে ওঠার পর থেকে যাত্রা শুরুর আগে পর্যন্ত রেল যাত্রীদের সুবিধার্থে বার বার অনেকগুলো ঘোষণা আসছিলো সাউন্ড বক্স থেকে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ রেলওয়েতে আপনাকে স্বাগতম। কোনো অপরিচিত ব্যক্তির হাতে কিছু খাবেন না। ট্রেনের মধ্যে খাবারের তালিকা দেওয়া আছে। খাবার সম্পর্কে কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখে অভিযোগ বক্সে ফেলুন। ক্যাশমেমো নিয়ে খাবারের বিল পরিশোধ করুন’।
কিন্তু 'কাজীর গরু, কিতাবে আছে গোয়ালে নেই'। এখানেও তাই হয়েছে। ট্রেনে এমন ঘোষণা থাকলেও কোনো বগিতেই খাবারের তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর পরীক্ষা করার জন্য খাবারের বিল পরিশোধের সময় ক্যাশমেমোর কথা বলতেই ট্রেন বয় ফারক হোসেনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। যেনো ক্যাশ মেমো চাওয়াটাই অপরাধ হয়ে গেছে।
খাবারের দাম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ডেনিস নামে অপর ট্রেন বয় বাংলানিউজকে বলেন, জেলি ব্রেড (দুই পিসের) ৩০ টাকা, দুই পিস চিকেন ফ্রাই ১২০ টাকা ও একটা ভেজিটেবল কাটলেটের দাম ৩৫ টাকা। আর দুধ চা ১০ টাকা এবং আদা দিয়ে তৈরি লাল চাও ১০ টাকা। ফলে ট্রেনে বসে একজন যাত্রীকে সকালের নাস্তা করতে হলে সব মিলিয়ে ১৯৫ টাকা খরচ করতে হবে।
'মেসার্স হাবিব বাণিজ্য বিতাণ' পশ্চিম রেলের এই রুটে খাবার সরবরাহ করে আসছে। তারা সবাই কর্মী, সব টাকা কোম্পানি পায়- তাদের করার কিছু নেই, জানান ডেনিস।
ডেনিসের বক্তব্য শুনেই আঁচ করা গেলো সকালের নাস্তা খেয়ে ট্রেনযাত্রী শফিকুল ইসলামের মুখ কেনো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আর কেনোই বা তিনি এত ক্ষুব্দ হয়েছিলেন।
ফাইসাল আহমেদ নামে আরেক ট্রেনযাত্রী বলেন, তিনি এই রুটের নিয়মিত যাত্রী। ট্রেনের খাবারের এই দামের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই! যার কাছে যেমন নিতে পারে- তার কাছে তেমন নেয়।
খাবার দিয়ে তারা এই রুটের যাত্রীদের পকেট কাটছে মেসার্স হাবিব বাণিজ্য বিতাণ, অভিযোগ ফাইসালের।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিল্কসিটি ট্রেনের গার্ড (পরিচালক) মণী রাজ সিং বাংলানিউজকে বলেন, ‘ট্রেনের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে যাত্রীরা অভিযোগ করতে পারবেন- কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
অভিযোগ বক্স কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বক্স নেই। অভিযোগ থাকলে বলুন খাতা লিখে নিচ্ছি'।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
এসএস/জিপি/এটি