বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে নারীর ছবি ও পর্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। চাঞ্চল্যকর কিছু ঘটনা সামনে এলেও সাইবার অপরাধের শিকার অনেক নারীর ঘটনাই থাকছে অজানা।
অপরাধ দমনে সরকার সতর্ক এবং কঠোর অবস্থানে থাকলেও সাইবার স্পেসে বিভিন্ন রকম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। আর এ কারণে প্রযুক্তিগত অপরাধ নিয়ে মানুষের উদ্বিগ্নতাও বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাইবার অপরাধের বিষয়ে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটি মেয়ে যখন সাইবার অপরাধের শিকার হন, তখন পরিবার ও সমাজ তাকেই বেশি দায়ী করে। এ সময় যদি কোনো ভিকটিম নারী আইনের আশ্রয় নিতে চান, সেক্ষেত্রেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরিবার থেকে বাধা দেওয়া হয়। এতে করে অপরাধী আরও উদ্বুদ্ধ হন। বর্তমানে নারীরাই সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। ’
ভিকটিম নারীর জন্য পারিবারিক সহায়তার গুরুত্ব দিয়ে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক সহযোগিতা। এছাড়া সাইবার অপরাধ দমনে নারীর সাহসিকতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ’
ফরিদা ইয়াসমিন ভিকটিম পরিবারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সাইবার অপরাধের শিকার হলে কোনো নারী যেন তা চেপে না রাখেন। তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তিনিই। এতে অপরাধী পার পেয়ে যাবেন এবং ওই অপরাধী আরও অপরাধ করবেন। এজন্য অন্য নারীদের বাঁচাতে ভিকটিম নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে। ’
এ বিষয়ে অপরাধ বিশ্লেষক আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘কু-মনস্তাত্ত্বিক কারণেই এই অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর চাপিয়ে রাখার কারণেও অপধারীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন নারীকে সর্বপ্রথম মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই এই অপরাধ অনেকাংশে কমবে। এছাড়া পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ’
এ বিষয়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব সিগমা হুদা বাংলানিউজকে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নারীরাই সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। আমাদের সমাজে পুরুষেরা মেয়েদের টার্গেট করে ফাঁদ পাতে। মেয়েদের শিকার মনে করে। এটা মানসিক রোগ। এটি থেকে পুরুষদের বেরিয়ে আসতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। ’
২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায় সংগঠিত অপরাধের বিচার শুরু হয়। ওই বছর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আইনে মামলা হয় ১৩টি। ২০১৪ সালে ৩০টি, ২০১৫ সালে ১৫২টি এবং ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৯৯টি মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
আরএটি/আরআর/এমজেএফ