ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বাংলাদেশ সফরে আসছেন বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি,২০১৭)। তার এই সফরের একদিন আগে বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি দূতাবাসের শার্জ দ্য আফেয়ার্স ইউসুফ এস রামাদান।
ইউসুফ রামাদান বলেন, গোটা বিশ্বে বাংলাদেশেই একমাত্র দেশ, যে দেশ ইসরায়েলকে তার পাসপোর্টে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। একথা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিটি সদস্য জানে। এজন্য প্রতিটি ফিলিস্তিনের চোখে বাংলাদেশ এক প্রিয় নাম। বাংলাদেশকে এরা সবাই যেমন একনামে চেনে, তেমনি প্রতিটি ফিলিস্তিনি গভীর ভালবাসার টানে জীবনে একবার অন্তত বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে চায়। কিন্তু দখলদার ইসরায়েলের দমন-পীড়ন ও নানা বাধানিষেধ ও বৈরিতার কারণে আপাতত সে আশা পূরণ হবার নয়।
শার্জ দ্য আফেয়ার্স আরো বলেন, এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই নিবিড় সম্পর্ককে আরো জোরদার ও নিবিড়তর করা।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টে মাহমুদ আব্বাস তিন দিনের সফরে ১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এটি বাংলাদেশে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। এর আগে তিনি একবার বাংলাদেশের ওপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সামান্য সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি করেছিলেন।
এবারের প্রথম আনুষ্ঠানিক সফরকালে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ। তিনি লা মেরিডিয়ান হোটেলে অবস্থান করবেন। তিনদিনের এই সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) মাহমুদ আব্বাস রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথক আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকালে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু আলোচনায় স্থান পাবে। এর আগে ১৯৮৭ সালে প্রথম ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সফর করেন আমাদের মহান নেতা ইয়াসির আরাফাত। ২০১৬ সালে মাহমুদ আব্বাস বাংলাদেশে যাত্রা বিরতিকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী তাকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সফরে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। এ সফর তারই ধারাবাহিকতা।
ফিলিস্তিনের অচ্ছেদ্য অংশ বলে বিবেচিত জেরুজালেম সম্পর্কে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেছেন, সে সম্পর্কে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জনাব ইউসুফ রামাদানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়
জবাবে রামাদান বলেন, ‘আমরা এখন ওয়েট অ্যান্ড সি’ পলিসি নীতিতে এগোচ্ছি। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানাত্বরিত করবে। তিনিই প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপতি নন যিনি এহেন হঠকারী ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিন্তু কেউইেএমন হঠকারি ইচ্ছা বাস্তাবায়ন করতে পারেনি। কারণ তারাও জানতেন এটা করতে গেলে কী সংকটে পড়তে হবে। ভোট টানার জন্য এমন সস্তা কথা অনেক বলা যায়। কিন্তু যখন আপনি হোয়াট হাউজে প্রবেশ করেছেন তখন আপনাকে অনেক বাস্তববাদী হতে হবে।
‘ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন’ উল্লেখ করে ইউসুফ রামাদান বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তিরত করে তাহলে ‘শান্তি চিরতরে বিদায় নেবে’। শান্তির আলোচনাও শেষ হয়ে যাবে। আর ফিলিস্তিন মনে করবে যুক্তরাষ্ট্র গায়ের জোরে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে অন্যায় স্বীকৃতি দিয়ে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি এমনটা করে তাহলে তা শুধু ফিলিস্তিন নয়, গোটা মুসলিম উম্মাহর শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ভৌগোলিক কারণে জেরুজালেমে ইসরায়েল দখলদারিত্ব কায়েম করে থাকলেও এটির প্রকৃত অবস্থান প্রতিটি ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে। ‘
তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলি দখলদাররা পশ্চিমতীর দখলের পর থেকে যত না বসতি স্থাপন করেছে, তার চেয়েও দ্রুত গতিতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অত্যাচারী সরকার তা করতে চাইছে। আমরা ইসরায়েলকে বারবার বলেছি, এ ধরনের পদক্ষেপ শান্তি আলোচনাকে চিরতরে শেষ করে দেবে। শান্তির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেবে। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু এখন সে পাঁয়তারাই করছেন।
মহান ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি সেখানে দেয়া তার বিখ্যাত ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার একহাতে জলপাইয়ে পাতা(শান্তি), অন্যহাতে ফিলিস্তিনের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ধারণ করে আছে। আমার হাত থেকে জলপাই পাতাটিই নিন। ’ এর অর্থ হলো আমাকে অস্ত্র ধরতে বাধ্য করবেন না। এর পরেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশই পিএলওকে স্বীকৃতি দেয়। আসলে আপনি ফিলিস্তিনকে সমর্থন করছেন মানে ন্যায়বিচারকে সমর্থন করছেন। যখন ইসরায়েলকে সমর্থন করছেন তখন শয়তানকে সমর্থন করছেন। এখন গোটা বিশ্বে এটি পরিষ্কার হয়ে গেল, কে শয়তান আর কে ফেরেস্তা। কার আধিকার কে হরণ করছে। কে দখলদার আর কে এর ভুক্তভোগী। ’
ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্টের সফরে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি, প্রধান বিচারপতি মাহমুদ আলহাব্বাস, প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবুরুদাইনাহ, কূটনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাজদি খালদিসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে আসবেন।
দু’দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ কমিশন গঠনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। ঢাকা সফরের শুরুতেই ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া মাহমুদ আব্বাস তাঁর সম্মানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আয়োজিত একটি নৈশভোজে যোগ দেবেন। তিন দিনের সফর শেষে আগামী তিন ফেব্রুয়ারি দুপুরে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
কেজেড/জেএম