মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিক্ষাধারার গতিপ্রকৃতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক মুজবাহ আলিম।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে শিক্ষাবিদ এ এন রাশেদা চৌধুরী বলেন, ১৯৭৫ সালের পর থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে পশ্চাৎদমুখীকরণ হচ্ছে। ২০১৭ সালে যে পাঠ্যপুস্তক তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠলেও হেফাজতে ইসলামির আমির শাহ আহমদ শফি বলেছেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। অথচ ২০১৭ সালে যে পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে সেগুলো বেদনদায়ক। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কী এখন আলোচনা করেই শেষ করবো নাকি সরকারের কাছে এই দাবি জানাবো সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত দেশ গড়তে অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক চাই।
তিনি বলেন, দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার দুরাবস্থা চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় এখন অধিক মনোযোগ সরকারের। মাদ্রাসা পরিচালনায় কোনো নীতিমালা নেই। মাদ্রাসা উন্নয়নের নামে অপচয় হচ্ছে। শিক্ষাধারায় দুর্নীতি ঢুকে যাচ্ছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের নামে কর্মকর্তাদের বিদেশে ভ্রমণ চলছে। ২০০৫ সালের সচিবালয় বা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রদায়িক শক্তি এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হায়দার আকবর খান রনো বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ করার চার দশক পরে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা ফিরে এসেছে। আবারও রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। যে হেফাজতে ইসলাম এই সরকারকে পতনের চেষ্টা করেছিলো এবং খালেদা জিয়া যেখানে সহায়তা করেছিলেন সেই হেফাজতের কথায় আজকে পাঠ্যপুস্তক বদলাচ্ছে। দলমত নির্বিশেষ সবার প্রতিবাদ করা উচিত।
সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা, প্রশ্ন করার ক্ষমতা, বিকাশের ক্ষমতা। কিন্তু যে অবস্থা চলছে তাতে বিকাশের বদলে অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি আমরা। শিক্ষার ব্যাপক রাজনীতিকরণ হয়েছে, দুর্নীতিকরণ হয়েচে, শিক্ষার সাম্প্রদায়িকরণ হয়েছে। এই পরিস্থিতি আত্মঘাতী। জাতিকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েল সাবেক অধ্যাপক স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, পাঠ্যপুস্তকের ভুলসহ অন্যান্য সমস্যার জন্য আলাদা করে কর্মসূচি নেওয়া উচিত। চরম অদক্ষ চরম দুর্নীতিবাজ লোকদের হাতে পড়েছে বলেই পাঠ্যপুস্তকে সমস্যা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষাখাতে নানামুখী সংকট রয়েছে। সবাই এখন সুবর্ণ (গোল্ডেন) বালক বা সুবর্ণ বালিকা চান। শিশুকাল থেকেই চেলেমেয়েরা গাইড বই পড়ছে। সেটা তো বন্ধ করা যায়নি। এখন ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞান পড়ে না কাজেই বিজ্ঞানমনস্ক হবে কী করে? এক শ্রেণি ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছে কারণ ইংরেজির কদর। তারা দেশ বুঝে না সমাজ বুঝে না। আবার ইংরেজি মাধ্যমসহ শিক্ষা ক্রমেই ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। ফলে দরিদ্ররা তাদের ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পাঠাচ্ছেন। তাদের সংখ্যাও অনেক।
কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ হচ্ছে। শিশু-কিশোররা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষা খাতে এতো বড় সংকট চললেও রাজপথে সেভাবে ছাত্রদের প্রতিবাদ নেই।
গবেষক স্বপন আদনান বলেন, দেশের শিক্ষাব্যাবস্থা যেন এখন একটি প্রকল্প। মেধাশূন্য জাতির দিকে যাচ্ছে বাংলদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
জেপি/এমজেএফ