ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অচিরেই এদেশের অনেক মাতৃভাষা হারিয়ে যাবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৭
অচিরেই এদেশের অনেক মাতৃভাষা হারিয়ে যাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট

বিশ্বে সাড়ে তিন হাজার জীবন্ত মাতৃভাষা রয়েছে। এখন বিশ্বে আর নতুন কোনো ভাষার জন্ম হচ্ছে না। তবে প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় একটি মাতৃভাষার মৃত্যু হচ্ছে। এভাবে প্রতিবছর প্রায় দুশো ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে।সংখ্যাটা অবশ্য একটু এদিক-ওদিক হতে পারে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ ‌আলী বাংলানিউজকে এ তথ্য দিয়েছেন।

ঢাকার সেগুন বাগিচায় অবস্থিত এই ইনস্টিটিউট বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্বের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসব তথ্য পেয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে মোটা দাগে দু’রকম ভাষা আছে। একটা হল সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা, আরএকটি সংখ্যালঘিষ্ঠের ভাষা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা সব সময় সংখ্যা লঘিষ্ঠের ভাষাকে হত্যা করে।

বৃহত্তর যোগাযোগের জন্য সংখ্যালঘিষ্ঠ ভাষাভাষীকে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা শিখতে হয়। বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৪ টি ভাষা এমনই শোচনীয় পর্যাযে রয়েছে যে, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এদের বেশ অনেকগুলো হারিয়ে যাবে। কারণ এ ভাষাগুলোর কথ্য ও লিখিত রূপ যথেষ্ট জোরালো অবস্থায় নেই। মানে এগুলো ভালোভাবে কথিত বা চর্চিত নয় আর।

ড. জীনাত ইমতিয়াজ ‌আলী বলেন, মানুষের মৌলিক যতগুলো পরিচয়চিহ্ন রয়েছে সেসবের মধ্যে ভাষা অন্যতম। একটি জাতি আলাদা হচ্ছে তার সংস্কৃতির জন্য। এ সংস্কৃতির অপরিমাপ্য উপাদান বা সম্পদ হচ্ছে ভাষা।

ইংরেজির মত ভাষাকে যে কোনো দেশের মানুষের মাতৃভাষার ওপর চাপিয়ে দেওয়াকে সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা বলে মনে করেন ড. ইমতিয়াজ। এটাকে লিঙ্গুয়িস্টিক ইমপেরিয়ালিজম বা ভাষিক ঔপনিবেশিকতাও বলা হয়ে থাকে। ঔপনেবেশিক প্রভুরা বা শাসকগোষ্ঠী সব সময় চেয়েছে তাদের ভাষা সঞ্চারিত করতে, অন্যদের ওপর আধিপত্য কায়েম করতে। আর সেজন্যই তারা বিভিন্ন জনগোষ্ঠির ওপর ভাষিক আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করেছে।

শাসকের নিজেদের ভাষাকে চাপিয়ে দিতে পারলে, ভাষিক আধিপত্য শাসিত জনগোষ্ঠির ওপর কায়েম করতে পারলে স্থায়ীভাবে শাসন ও শোষণটাও করা যায়। কোনো সভ্য ও সুবুদ্ধির মানুষ এটাকে পশ্রয় দিতে পারে না। সবাই নিজের ভাষা আগে শেখে। মানুষ যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখনই মাতৃভাষা সম্পর্কে তার ভেতরে সংবেদনা সৃষ্টি হয়।  

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ ‌আলী আরও জানান, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা আমাদের একটা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটও খুবই গুরুত্বের সাখে তা বিবেচনা করে পালন করার চেষ্টা করে। এ উপলক্ষ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি এখানে অনুষ্ঠিত হবে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার। বিষয় হল মাদার লেঙ্গুয়েজ ডকুমেন্টশন এবং মান্টি লিঙ্গুয়াল এডুকেশন। এ সেমিনারে ভারত ও নেপাল থেকে বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও অংশ নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৭

কেজেড/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।