অভিযানকালে মিডিয়া কর্মীদের পেশাগত দায়িত্বপালনে বাধা, অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগে সাংবাদিকরা ম্যাজিস্ট্রেটের অপসারণ দাবি করে প্রতিবাদ সমাবেশ, অবরোধ ও স্মারকলিপি দেন।
জেলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অ্যাসোশিয়নের পক্ষে ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে জেলা শহরের সব ক্লিনিকে ধর্মঘট শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. তায়েব-উর-রহমান আশিকের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অভিযান পরিচালনা করেন।
বেলা ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. তায়েব-উর-রহমান আশিকের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত শহরের কানুছগাড়ীতে অবস্থিত ফাতেমা জেনারেল হসপিটালে অভিযান পরিচালনা করেন।
বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাংলানিউজকে বলেন, এ হসপিটালে মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের ডা. ফয়েজের নাম করে দালাল রোগী নিয়ে আসে। সেই রোগী ডা. ফয়েজের পরিচয় দিয়ে রোগী দেখার সময় হাতেনাতে ধৃত হন পল্লী চিকিৎসক ওমর ফারুক।
বিপজ্জনক এক্সরে রুম, পল্লী চিকিৎসককে দিয়ে রোগী দেখানো, প্যাথোলজি রিপোর্টে ডাক্তারের স্বাক্ষর না থাকা, কোনো রোগীর ফাইলপত্রে কোনো ডাক্তার বা সার্জনের নাম না থাকা ও দালাল দিয়ে রোগী এনে প্রতারণা করার দায়ে ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিককে দুইটি ধারায় মোট ৩ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
একই আইনে ভূয়া ডাক্তারকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
এ হসপিটালে অভিযানকালে বগুড়া প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমানকে পেশাগত দায়িত্বপালনে বাধা, অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অশালীন মন্তব্য করেন ম্যাজিস্ট্রেট। খবর পেয়ে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম নয়ন সেখানে গেলে তার সঙ্গেও এই ম্যাজিস্ট্রেট একই ধরনের ব্যবহার করেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের সাতমাথায় অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাংবাদিকরা। সমাবেশ থেকে সাংবাদিক নেতারা ম্যাজিস্ট্রেট ডা. তায়েব-উর-রহমান আশিকের অপসারণ দাবি করেন।
সমাবেশ শেষে একই দাবি জানিয়ে সাংবাদিক নেতারা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আশরাফ উদ্দিনকে স্মারকলিপি দেন। পরে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের ব্যাপারটি দেখার আশ্বাস দেন।
এসময় বগুড়া প্রেসক্লাব সভাপতি যাহেদুর রহমান যাদু, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম নয়ন, নবনির্বাচত সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমান, সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু, যুগ্ম সম্পাদক জিএম সজল, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক জেএম রউফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. তায়েব-উর-রহমান আশিক বাংলানিউজকে বলেন, আমি কোন সাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্বপালনে বাধা দেইনি। কারো সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার বা অশালীন মন্তব্য করিনি।
দুপুরে শাজাহানপুর উপজেলার বি-ব্লকে অবিস্থত ম্যাক্সকেয়ার ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে সেনাবাহিনীর মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট নাকের অপারেশন করে। সবমিলিয়ে এই ক্লিনিকের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। পরে ক্লিনিকের মালিক, কথিত সার্জন ও ডিউটি ডাক্তারকে একই আইনে মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা তাৎক্ষণিক আদায় হয়।
অভিযানে র্যাব-১২ সদস্য, জেলা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপতরের উপ-পরিচালক ও পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেক্টর সার্বিক সহায়তা দেন।
বিকেলে জেলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অ্যাসোশিয়ন সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানকালে ম্যাজিস্ট্রেট অযৌক্তিক মাত্রায় অর্থদণ্ড করছেন। এছাড়া একজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ধর্মঘট ডেকেছি। তবে আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের অপসারণ চাই না।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম