শুক্রবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দিনভর মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর থাকায় সকাল থেকেই বইপ্রেমীরা আসতে শুরু করে। বিকেলে নামে মানুষের ঢল।
একেবারে শিশু থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত সব বয়সী বই প্রেমীদের আনাগোনায় মেলা প্রাঙ্গণ রুপ নেয় চিরচেনা প্রাণের মেলায়।
বিভিন্ন প্রকাশীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তৃতীয় দিন হলেও মেলায় বিক্রি ভালো হয়েছে। বৃহস্পতিবারের (০২ ফেব্রুয়ারি) চেয়েও ক্রেতাদের সাড়া বেশি।
কথা প্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি জাফরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় দিন হিসেবে মেলার বিক্রি অনেক ভালো। মেলায় আগতরা শুধু ঘোরেননি, কিনছেনও। বিক্রি বাড়ে সাধারণত মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু এবার এখনই জমে উঠতে শুরু করেছে।
প্রতিভা প্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, বই না কিনে কেউ ফেরত যাননি। মেলার শুরু দিকেই এমন, সামনে আরও ভালো যাবে।
তৃতীয় দিনে লেখকদের মধ্যে ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক প্রমুখ এসেছিলেন।
বাংলা একাডেমির পরিচালক (জনসংযোগ, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ) অপরেশ কুমার ব্যানার্জি সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি ) মেলায় নতুন বই এসেছে মোট ১৩০টি। এগুলোর মধ্যে গল্প ১৩টি, উপন্যাস ২৮টি, প্রবন্ধ ৩টি, কবিতা ৪১টি, গবেষণা ৪টি, ছড়া ৭টি, শিশুসাহিত্য ৪টি, জীবনী ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ ৭টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান ২টি।
এছাড়াও ভ্রমণের ১টি, ইতিহাস ৩টি, রম্য/ধাঁধা ১টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি ও অন্যান্য ১০টি নতুন বই এসেছে। আর মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ১৪টি নতুন বইয়ের।
আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের কর্মসূচি:
আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের ৩য় দিনে ছিল মেলা প্রাঙ্গণ জমজমাট। এদিন সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বাংলা কবিতা বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি শ্যামলকান্তি দাশ এবং অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি অসীম সাহা, ইকবাল হাসান, তুষার দাশ ও ফরিদ কবির। এই অধিবেশন সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।
দ্বিতীয় পর্বে বিকেল ৩টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে বাংলা প্রবন্ধ-সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাবন্ধিক সুমিতা চক্রবর্তী।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের গবেষক সুনন্দা সিকদার, কথাসাহিত্যিক পূরবী বসু, প্রাবন্ধিক মোরশেদ শফিউল হাসান, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান, অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল, পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র গবেষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, চীনের অনুবাদক ইয়াং উই মিং সর্না ও পশ্চিমবঙ্গের গবেষক ইমানুল হক। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার।
বিকেল ৫টায় মেলার মূলমঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও পশ্চিমবঙ্গের গবেষক জিয়াদ আলী, ড. আমিনুর রহমান সুলতান। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।
একই সময় শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে সাহিত্য ও ফোকলোরের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ফিরোজ মাহমুদ ও শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শফিকুর রহমান চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ, সাইমন জাকারিয়া ও সাকার মুস্তাফা। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
অন্যদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও অন্যভাষার কবির স্বরচিত কবিতা এবং ছড়া পাঠ। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সুকুমার বড়ুয়া।
চতুর্থ দিনের অনুষ্ঠানসূচি:
মেলার চতুর্থ দিন (৪ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের শেষ দিন। মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। কালও থাকছে ১ টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর।
সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম পর্ব আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, আলোচনায় থাকবেন আবদুস সেলিম, মিজারুল কায়েস ও খায়রুল আলম সবুজ। সভাপতিত্ব করবেন মুহম্মদ নূরুল হুদা।
দ্বিতীয় পর্বে মেলার মূল মঞ্চে শিশু-কিশোর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হবে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাশেদ রউফ। আলোচনায় থাকবেন আলী ইমাম, রফিকুর রশীদ ও লুৎফর রহমান রিটন। এতে সভাপতিত্ব করবেন হায়াৎ মামুদ। এছাড়া বাংলা নাট্যসাহিত্য, বাংলা ভাষার স্বরচিত কবিতা পাঠও অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৭
ইইউডি/পিসি