সোমবার রাতে দায়িত্ব পাওয়ার পরদিনই মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় ৫ নম্বর সেক্টরে ১ এর ২৯ নম্বর বাসায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন নতুন সিইসি।
এ সময় তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনই আগামী সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে বলে স্মরণ করিয়ে দিলে নূরুল হুদা বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে নূরুল হুদা বলেন, এটা গুরু দায়িত্ব। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি ও আমার কমিশন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কঠিন চ্যালেঞ্জ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ তো বটেই। কিন্তু নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। সব দেশে তাই হয়। এদেশেও তাই হবে। সে রকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে দেরি হবে, সময় লাগবে। হয়তো দুই একটা টার্মে ডিস্টার্ব হবে। তারপর ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।
নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, আমার বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। নিরপেক্ষতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, সংবিধানের ধারা সম্মুনত রাখা। এর বাইরে আর কিছু নেই।
আমার কাছে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব নেই। বিশেষ কোন ব্যক্তির গুরুত্ব নেই। বিশেষ কোন গোষ্ঠীর গুরুত্ব নেই। আমার কাছে গুরুত্ব পাবে ইনসট্রুমেন্ট, লিগ্যাল ইনসট্রুমেন্ট। সংবিধান ও এর অধীনে তৈরি আইন। কোন লোক অন্যায় সুবিধা আমার কাছ থেকে পাবে না, আশা করি আমার কমিশনের কাছ থেকেও পাবে না।
আগামী দিনের কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনারদের সঙ্গে বসে কর্মপন্থা ঠিক করবেন জানিয়ে সাবেক এই আমলা বলেন, আমাদের নির্বাচনের জন্য একটা ছক তৈরি করতে হবে। কাজের একটা ছক তৈরি করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেই নি। এখনো সময় আসেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ থাকলে বসতে হবে।
দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা নির্বাচন কমিশনকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন নূরুল হুদা।
আগামীতে সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনতে কাজ করবেন জানিয়ে নতুন সিইসি বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করবো যাতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহী হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক দল কিভাবে কি কাজ করবে সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। তারা তো আমাদের কথাতে কর্মসূচিও দেবে না। তাদের কর্মকাণ্ডও ঠিক করবে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী হবে নিরপেক্ষ। এখানে কোন পক্ষপাতিত্ব হবে না।
অন্য কমিশনারদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাইকে অনেক রকম বাছাই করে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে ধারায় কাজ করেছে নতুন কমিশন কি একই ধারায় এগুবে- এ প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, ধারা কোন দিন এক থাকে না। ধারা পরিবর্তন হয় পরিস্থিতির ওপরে। সামনে যে পরিস্থিতি হবে তার ওপর নির্ভর করে আমাদের স্ট্রাটেজি ঠিক করতে হবে। তাদের একটা অবস্থান ছিলো, আমাদের হয়তো অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। মাঠ পর্যায়ের পুরনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে উল্লেখ করে নতুন সিইসি বলেন, অভিজ্ঞতাটাই আমার অ্যাসেট। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করেছি, সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করেছি নির্বাচনের সুপার ভাইজার হিসেবে কাজ করেছি জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে। আগামীতে এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবো।
ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন অনেক সমৃদ্ধ। এত বছরে একটা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, ভিত্তি তৈরি হয়ে গেছে। সেটাকে ব্যবহার করলে আমার মনে হয় কোন অসুবিধে হবে না। অনেক সুন্দর নির্বাচন এদেশে হয়েছে। তাহলে ভবিষ্যতে হবে না কেন?
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
এমইউএম/জেডএম
** ১৫ ফেব্রুয়ারি নুরুল হুদা কমিশনের শপথ