ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জেএমবি সারোয়ার-তামীম গ্রুপের আইটি চিফ আশফাক

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
জেএমবি সারোয়ার-তামীম গ্রুপের আইটি চিফ আশফাক

ঢাকা: নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) সারোয়ার-তামীম গ্রুপের শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি নেতা-কর্মীদের ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি) বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ আশফাক-ই-আজম ওরফে আপেল। এই সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গিনেতারা আইটি বিষয়ে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে সাংগঠনিক বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদানে খুব একটা পারদর্শী ছিলেন না। তথ্য-প্রযুক্তিতে তাদের গুছিয়ে আনতেই কাজ করছিলেন আইটি চিফ আশফাক।

মূলত অ্যাপসের মাধ্যমে সাংগঠনিক বার্তা আদান-প্রদানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে নিয়োজিত ছিলেন সারোয়ার-তামীম গ্রুপের আইটি শাখার এই প্রধান।

গত ০১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে একটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের আইটি শাখার প্রধান আশফাকসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিস্ফোরক তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার চার জঙ্গি সদস্য হলেন, মো. আশফাক-ই-আজম আপেল, মাহবুবুর রহমান, শাহিনুজ্জামান ও আশরাফুল ইসলাম।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, জেএমবির আইটি শাখার প্রধান আশফাক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয়ে পড়াশোনা করার কারণে প্রযুক্তিগত বিষয়ে খুব দক্ষ। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও আইটি সেকশনে কাজ করেছেন তিনি। গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়ে নিজেদের মধ্যে নিরাপদ যোগাযোগ নিশ্চিত করতে জঙ্গি নেতাদের এনক্রিপ্টেড অ্যাপস ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন আশফাক। এই অ্যাপস ব্যবহারে প্রেরিত বার্তা কোনোভাবেই ডিক্যাপ (উদ্ধার) করা সম্ভব নয়। বিশ্বের শীর্ষ জঙ্গি সংগঠন আইএস’র সদস্যরা তাদের বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদানের জন্য এনক্রিপ্টেড অ্যাপস ব্যবহার করেছেন। সেই বিষয়টি ধারণ করেই জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের জঙ্গিনেতাদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল।

র‌্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, গুলশান হামলার সময় জঙ্গিরা বার্তা পাঠাতে শিওর-স্পট, টেলিগ্রামের মতো অ্যাপস ব্যবহার করেছেন। জঙ্গি নেতা নুরুল ইসলাম মারজানের সঙ্গে তথ্য ও ছবি আদান-প্রদানে এই অ্যাপসগুলো ব্যবহার হয়েছিল।

র‌্যাব-১০-এর অধিনায়ক (সিও) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বাংলানিউজকে বলেন, জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাবকে দেওয়া হয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে আরও তথ্য পেতে অতি দ্রুত আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই সংগঠনের আত্মগোপনে থাকা অন্য সদস্যদের বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

মূলত ২০১১ সালে জেএমবি সংগঠনে যুক্ত হন আশফাক। এরপরে চট্টগ্রামে গিয়ে অস্ত্র চালানোর ওপর প্রশিক্ষণ নেন। পরে জেএমবির আইটি সেক্টরে কাজ শুরু করেন। ২০১৬ সালের ০৯ আগস্ট জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের আইটি শাখার প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান সিফাতকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে সংগঠনের আইটি শাখার দায়িত্ব পান আশফাক।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে সিএসই সম্পন্ন করেন এই যুবক। এছাড়াও গুলশান, উত্তরা ও মোহাম্মদপুরে বিভিন্ন আইটি ফার্মে প্রোগ্রামার হিসেবে কয়েক বছর কাজের অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭
এসজেএ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।