বাসায় ফিরলেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে। ছেলেকে বলে যাওয়া আলাপ করা হলো না বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক (ডিপোজিট একাউন্টস বিভাগ) গোলাম হোসেনের (৪৮)।
মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল আটটার দিকে রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
ওয়ারী থানায় নিহত গোলাম হোসেনের ছোটভাই আলী হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাতিজাকে সকালেই স্টেশন থেকে বাসায় নিয়ে আসেন। অফিস থেকে ফিরে ছেলের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে গেলেন, কিন্তু তিনি আর ফিরলেন না। ’
তিনি জানান, তাদের চার ভাইয়ের মধ্যে গোলাম হোসেন সবার বড়। কদমতলী থানার মুরাদপুর হাইস্কুল রোডের ১১৫ নম্বর বাসায় তারা বসবাস করেন। গোলাম হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সালমান হোসেন পরাগ রুয়েটে পড়াশোনা করেন। ছোট ছেলে আরমান হোসেন তুরাগ এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন, আর মেয়ে মমতাজ বেগম অনুরাগ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন।
আলী হোসেন আরও বলেন, ‘ভাইয়া ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতেন না। খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। সকালে অফিস যেতেন বাসে চড়ে বা রিকশায়। কখনো হেঁটেও অফিস যেতেন। ’
ঘাতক বাসের ড্রাইভারের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ভাইকে তো আর পাবো না। আমরা ওই চালকের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
নিহতের প্রতিবেশী সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একটা ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় গোলাম হোসেন ছিলেন সেটাই। পরিচিত কারও বিপদ হলে তিনি সেখানে সাধ্যমতো সাহায্য করতে ছুটে যেতেন। যাকে যেভাবে পেরেছেন সহায়তা করেছেন। তার সঙ্গে কারও ঝগড়া ছিলো না। ’
তিনি বলেন, ‘নিজের জায়গায় একটা একতলা ভাঙা বাসায় তিনি বসবাস করতেন। তাকে বাড়ি বানানোর কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলতেন, ‘টাকা পাবো কই?’ অত্যন্ত সৎভাবে জীবন-যাপন করতেন তিনি। এমন লোক এ যুগে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
ইত্তেফাক ভবনের খানিকটা দূরে ঘটনাস্থলের পাশের দোকান বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী বিল্লাল হোসেন বলেন, আট নম্বর বাসটি মতিঝিলের দিকে যাচ্ছিলো। তারপর হঠাৎ করে বাসের চাকা পাংচার হয়ে বাসটি উল্টে যায়।
মরদেহটির সুরতহাল প্রতিবেদন করেন ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, নিহতের মাথার বাম পাশে ও বুকের ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মরদেহটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আলীম হোসেন শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, সকালে দুর্ঘটনাস্থল সড়কের আইল্যান্ডের ওপর দাঁড়িয়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন গোলাম হোসেন। এ সময় দ্রুতগতির মতিঝিলগামী একটি ৮ নম্বর বাস ওই আইল্যান্ডের উপর ওঠে উল্টে যায়। বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গোলাম হোসেন মাথায় গুরুতর আঘাত পান। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘাতক বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় আহত হয়ে সুজন (২৮) ও জালাল উদ্দিন ঢামেকে ভর্তি আছেন। শাহিদা আক্তার নামে আরেকজন ঢামেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭
পিএম/ওএইচ/আরআই