ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সালথায় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় নকলের হিড়িক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
সালথায় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় নকলের হিড়িক সালথায় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় নকলের হিড়িক/ ছবি: বাংলানিউজ

ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথায় এসএসসির ইংরেজি প্রথমপত্র ও দাখিলের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায় নকলের হিড়িক পড়েছে। এ ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ২ শিক্ষককে অব্যাহতি ও একজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) তৃতীয় দিনে সালথা মডেল উচ্চ-বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসির ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় মোট ১ হাজার ৬৫ জন পরীক্ষার্থী ও সালথা কলেজ কেন্দ্রে দাখিলের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় মোট ২৬৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।

সালথা মডেল উচ্চ-বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের শরীর তল্লাশি করছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী।

এ সময় কয়েকশ’ পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ২-৩ ঝুড়ি নকলের কাগজ উদ্ধার করেন তিনি। পরীক্ষা চলাকালে স্থানীয় বিভিন্ন উচ্চ-বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বহিরাগত কয়েকজন প্রভাবশালী লোককে কেন্দ্রের মধ্যে ঘুরতে দেখা যায়।

কেন্দ্রে পরিদর্শনে এসে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. এরাদুল হক কেন্দ্রের পরিবেশ ও নকলের হিড়িকের চিত্র দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেন্দ্র সচিব বৈদ্য স্বপ্নাকে তিনি বলেন, আপনার কেন্দ্রের মতো এতো খারাপ পরিবেশে ও নকলের আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া এ বছর কোথাও দেখিনি।

পরে কেন্দ্রের এ অবস্থা দেখে কয়েকজন পরীক্ষার্থীর দেহ তল্লাশি চালান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। এ সময় ৫ জন পরীক্ষার্থীর কাছে নকল পাওয়ায় তাদের বহিষ্কার করেন তিনি।

বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীরা হলেন, কাগদী উচ্চ-বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী মো. আনিছুর রহমান, অনিক মোল্যা, নাইম মিয়া, নারানদিয়া উচ্চ-বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী সোহাগ মীর ও মো. রহমান।

এছাড়া কেন্দ্রের জানালা দিয়ে পরীক্ষার্থীর কাছে নকলের কাগজ দেওয়ার সময় বহিরাগত এক যুবককে আটক করা হয়। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত যুবকের নাম পরিমল মালো।

তিনি উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের সাড়কদিয়া গ্রামের পরেশ মালোর ছেলে।

অন্যদিকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই শিক্ষককে কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, সালথা মডেল উচ্চ-বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবাস চন্দ্র মল ও অনিমেশ সাহা।           

সালথা কলেজে দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন বহিরাগত মাদ্রাসা শিক্ষক তাদের নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের কাছে নকলের কাগজ তুলে দিচ্ছেন। এক রকম ঢাক-ঢোল পিটিয়েই কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা সবার সামনে তারা তাদের পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নকল। এ সময় একজন শিক্ষককে নকলের কাগজ সহকারে দেখা যায়। তিনি মাঝারদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আবুল বাসার।

এই কেন্দ্রে তাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তারপরেও তিনিসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকরা কেন্দ্রে এসে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নকল।

আপনি কেন কেন্দ্রে এসে পরীক্ষার্থীদের হাতে নকলের কাগজ দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্ত শিক্ষক আবুল বাসার বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেন।

বিষয়টি কেন্দ্র সচিব মাওলানা সায়েম হোসেনকে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের খারাপ ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকেন। অথচ কেন্দ্র সচিবের সামনেই নকল বিলি করেন এসব শিক্ষকরা।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকীকে ফোন করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফোনের লাইন কেটে দেন।

পরীক্ষা কেন্দ্রে অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ মোহাম্মাদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে যারা নকল নিয়ে এসেছে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণে দুই শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও এক যুবক কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭
আরকেবি/আরআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।