ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভিক্ষা করে চলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সংসার

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
ভিক্ষা করে চলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সংসার ভিক্ষা করে চলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সংসার / ছবি: আরিফ জাহান

সোনাতলার ছোট বালুয়া গ্রাম ঘুরে: মিতু, শারমিন ও শহীদ। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু ওরা। শিশুশ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে।

স্থানীয় ছোট বালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ওদের হাতিখড়ির পাঠশালা। বাড়ির উঠানে পলিথিনের বস্তায় বসে ওরা নাড়াচাড়া করছিল পাঠ্যবই।


 
সেখানে বসেই ওদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। দুরন্তপনায় ওদের কোনো ঘাটতি ছিল না। হাসি গল্প ঠাট্টায় মেতে ছিলো ওরা। একের পর এক বইয়ের পাতা উলোটপালোট করছিল।
 
কথা বলায় পটু এসব শিশুরা হঠাৎ ইশারায় কি যেন বলাবলি শুরু করে নিজেরাই। অ, আ, ই, ঈ, ছড়া, কবিতা এ প্রতিবেদককে পড়িয়ে শোনায় ওরা। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও দৃষ্টিশক্তি পাহাড় সমান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওদের আগামীর পথ চলায়।
 
পাশেই এজেদা বেগম রান্নাঘরে নিপুণ গিন্নির মতো রান্নাবান্নার কাজ করছিলেন। পিঁড়িতে বসা এজেদার কোলে তখন শোভা পাচ্ছিল এক শিশু। সময় সময় চুলোতে লাকড়ি দিচ্ছিলেন। সমান গতিতে জ্বলছিল চুলোর আগুন।
 
কাজকর্মে তার হাত-পা একজন স্বাভাবিক নারীর মতই সচল। অথচ তিনি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী। যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাটা মুশিকল বৈ কি!
 ভিক্ষা করে চলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সংসার
রান্নার ফাঁকেফাঁকে কথা হয় এজেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, আমাগো খবর কেউ নেয় না। আমরা কি করে চলি। কি খেয়েপরে বেঁচে থাকি। নাকি না খেয়ে থাকি। এসব খবর কেউ নিতে আসে না। বাবা (প্রতিবেদক) কানাদের (স্থানীয় ভাষায় অন্ধ বা দৃষ্টিপতিবন্ধীদের ‘কানা’ বলে ডাকা হয়) খবর জেনে কি করবেন।
 
এ এক দুঃসহ জীবন। জন্মের পর থেকে এই জ্বালা ভোগ করে আসছি। এখন অনেক বয়স হয়ে গেছে। সবকিছু সহ্য হয়ে গেছে--- যোগ করেন এজেদা বেগম।
 
মিটুল, সাহেব আলী, ইউনুস আলীসহ একাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যন্ত গ্রামের ‘কানা’ ব্যক্তিরা জীবিকার সন্ধানে শহরমুখি হন। কাকডাকা ভোরে তারা বাড়ি থেকে বের হন। কেউ সোনাতলা রেলস্টেশন থেকে রেলে বগুড়া শহরে যান। আবার কেউবা সেখানে যান বাস অথবা ছোটখাটো বিভিন্ন যানবাহনে চেপে। নানান ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ।
 
তারা সারাদিন শহর চষে বেড়ান। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন সামান্য ক’টি টাকার জন্য। দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্যে। এভাবে দিনে ২০০-২৫০ টাকা রোজগার করতে হয়। এ পরিমাণ টাকা হাতে না আসা পর্যন্ত বাড়িমুখি হন না তারা।
 
কারণ জানতে চাইলে এসব ব্যক্তিদের কেউ কেউ জানালেন এর কারণ। তাদের মতে, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সামান্য জায়গার ওপর তাদের ঘর। টিনের ছাউনি ও টিনের ঘের দেওয়া এসব ঘর তৈরি করতে তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে কিস্তির ওপর ঋণ নিয়েছেন। প্রত্যেক সপ্তাহে কিস্তির টাকা গুণতে হয়। এরপর খাওয়া ও কাউকে কাউকে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচও যোগান দিতে হয়।
 
তারা আরো বলেন, ভিক্ষার টাকায় চলে সংসার। ন্যূনতম পরিমাণ টাকা রোজগার না হলে কেউ বাড়ি ফেরেন না। তাই বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। অনেকের রাতও হয়। এভাবে অন্ধত্বে অভিশাপ নিয়ে এ গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষগুলো বেঁচে রয়েছেন।
 
কিন্তু তাদের প্রতি সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আজো পর্যন্ত সেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেননি বলেও অভিযোগ এসব ব্যক্তিদের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম
 
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।