কাজ শেষ না হওয়ায় কোথাও কোথাও গাড়ি চলছে আবার দুই লেনে। এতে করে দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে ছুটতে হচ্ছে চালকদের।
সরেজমিনে দেখা গেলো, ভালুকা ডিগ্রী কলেজের সামনে থেকে ভালুকা ব্রিজ মোড় পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজ চলায় বার বার লেন পরিবর্তন করতে হয়। ভালুকা বাসস্ট্যান্ড মোড়ের কাছেই সড়কে পড়ে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। ভালুকা থানার মোড়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহমুখী লেনের সড়কের কাজ এখনো বাকি। ফলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী লেন দিয়ে উভয় দিকের বাস চলাচল করে। এখানেও শুরু হয়নি ডিভাইডারের কাজ। শেখ জহুর উদ্দিন সিএনজি স্টেশনের কয়েক গজ দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ডিভাইডারের সামগ্রী।
স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের কাঁঠালি এলাকার ঢাকা থেকে ময়মনসিংহমুখী লেন অচল হয়ে আছে। পাশের লেন দিয়েই উভয় দিকের যান চলছে। আবার স্থানীয় বিকন ফার্মার সামনে থেকে মাত্র ২’শ গজ এগুতেই পুনরায় লেন পরিবর্তনের বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা ড্রিম ওয়ার্ল্ড মিনি পার্ক সংলগ্ন অংশেও।
স্থানীয় মেহেরবাড়ি সামনে গিয়ে দেখা গেলো, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহমুখী লেনের অনেক কাজ বাকি। সেখানে রোলারের কাজ চলছে। আবার স্থানীয় রশিদ ফিলিং স্টেশন থেকে কোকাকোলা মোড় পর্যন্ত ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী অংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেখানে পাথর ফেলে সবেমাত্র রোলার চালানো হচ্ছে।
মহাসড়কের ভালুকা পয়েন্টে বার বার লেন পরিবর্তনের বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে এক বাসচালক জানান, ‘ভালুকা পয়েন্টে ঠাণ্ডা মাথায় গাড়ি চালাতে হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে রাতে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ’
একই রকম অভিযোগ করে স্থানীয় মেহেরবাড়ি এলাকার দোকানি আনসারুল বাংলানিউজকে বলেন, সড়কের বেশিরভাগ অংশে ডিভাইডার হয়নি। ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এমনকি অনেক অংশেই আজ অবধি শুরু হয়নি ড্রেন ও ডিভাইডার নির্মাণের কাজ। এসব কাজ শেষ হলে তবেই মহাসড়ক দৃষ্টিনন্দন করতে রোড ডিভাইডারে সবুজ ঘাস লাগানোর কাজ শুরু হবে।
মূলত তৃতীয় প্যাকেজে প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের (পিবিএল) দায়সারা ও নিম্নমানের কাজের খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। ফলে এ মহাসড়ক উদ্বোধনের ৬ মাস পরেও এ অংশের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
এসব বিষয়ে মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বাংলানিউজকে জানান, এ মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার কাজের রিপায়ার হচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
মহাসড়কের চার লেন প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ পয়েন্টের কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। কয়েক স্থানে ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করতে হলেও চলাচলে কোন সমস্যা হচ্ছে না। চারলেনে সবাই নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছে। যাতায়াতে আগের তুলনায় সময়ও কম ব্যয় হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহের সড়ক যোগাযোগ আরামদায়ক, সহজতর, নিরবিচ্ছিন্ন ও যানজটমুক্ত করতে ২০১০ সালের জুলাইয়ে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক চারলেনের এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়।
ওই মাসেই শুরু হওয়া ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ৯৯২ কোটি টাকা। পরবর্তীতে দু’দফায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। চারটি প্যাকেজে এ প্রকল্প শেষ হবার কথা ছিল ২০১৩ সালের জুনে।
এরপর ভালুকা পয়েন্টের ১১ কিলোমিটারের দুই লেনের নির্মাণ কাজ শেষ না করেই গত বছরের ২ জুলাই উদ্বোধন করা হয় এ মহাসড়ক। সড়কটির ন্যূনতম প্রস্থ ২১.২ মিটার আর বাজার, বাণিজ্যিক অংশে প্রশস্ততা ২৫ থেকে ৩৫ মিটার।
চারটি প্যাকেজের মধ্যে তিন নম্বর প্যাকেজে আমিরাবাড়ি থেকে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়কের দুই লেন নির্মাণ কাজ চার দফা সময় দেয়ার পরেও শেষ করতে না পারায় প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের (পিবিএল) কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। পরে এ কাজ দেয়া হয় সেনাবাহিনীকে। গত বছরের শেষের দিকে তারা এ কাজ শুরু করে।
বাংলাদেশ সময় ১৪৩০ ঘন্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
এমএএএম/আরআই