ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কোথায় যুদ্ধ করেছেন জানেন না ‘মুক্তিযোদ্ধা’ জিল্লুর!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭
কোথায় যুদ্ধ করেছেন জানেন না ‘মুক্তিযোদ্ধা’ জিল্লুর!

ঢাকা: যুদ্ধ কোথায় করেছেন তা জানেন না। সেক্টর বা সাব সেক্টর কি? তাও অজানা। তা সত্ত্বেও তিনি মুক্তিযোদ্ধা! সরকারি সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাতারেই। তবে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এখন বলছেন,যাচাই বাছাইয়ে না টিকলে ফেরত দেবেন সরকারি ভাবে নেয়া সকল সুযোগ সুবিধা।

তবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, ফেরত দিলেই হবে না। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ভুয়া পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নেয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করা প্রয়োজন।

ভুয়া এই মুক্তিযোদ্ধার গ্রেপ্তারও দাবি করেছেন অনেকে।

ভুয়া এই মুক্তিযোদ্ধার নাম জিল্লুর রহমান। সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়নের জিরাবো গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে তিনি। একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এই চিত্র।

সরকারি দপ্তরে অনুসন্ধান করে জানা গেছে,বিগত বিএনপি সরকারের আমলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ভুয়া এই মুক্তিযোদ্ধার নাম ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়। ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত গেজেটে তার নম্বর ২৪৩১।

অনুসন্ধানে দেখা যায় বয়স জালিয়াতি করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়েই এই তালিকায় নাম তুলেছিলেন জিল্লুর রহমান। যেখানে তার জন্ম তারিখ ০১/০৬/১৯৫৫ উল্লেখ রয়েছে।

স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জিল্লুর রহমানের ভোটার আইডি নম্বর ২৬২৩২২৯৩১৮১১। মায়ের নাম মৃত চন্দ্র বানু। পেশা: ব্যবসা। জন্ম তারিখ ০১/০১/১৯৬০।
জিল্লুর রহমান
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হতে এখানে তিনি বয়স বাড়িয়ে নিয়েছেন ৫ বছর।

স্থানীয়রা জানান, চার ভাই দুই বোনের মধ্যে জিল্লুর রহমান পঞ্চম। তার ডাক নাম দিলা। তিনি পেশায় আগে মিনিবাসের সুপারভাইজার ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা বনে যাওয়ার পর হজ পালন শেষে সবাই এখন তাকে চেনেন দিলা হাজী নামে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, তিনি যেভাবে বয়স জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন সে হিসেব করলে তার জন্ম হবে বড় ভাইবোনদের আগে! সরকারি নথিতে জিল্লুর জন্ম সাল ১৯৫৫ দেখালেও তার বড়ভাই  দেলোয়ার হোসেনের জন্ম হয় ১৫/১/১৯৫৮ সালে।

যোগাযোগ করা হলে ইয়ারপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জুলহাস দেওয়ান বাংলানিউজকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা সনদে জিল্লুর রহমানের সনদ, স্মারক বা তারিখের কলামে কিছুই নেই। এমনকি সকলের মুক্তিবার্তা নম্বর থাকলেও তাও জিল্লুরের নেই।

"আমরা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি,আর যুদ্ধ না করেও যদি কেউ সমান সুযোগ সুবিধা আর মর্যাদা ভোগ করে- তা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের জন্যে দুঃখজনক। জানান ইয়ারপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জুলহাস দেওয়ান।

এসব বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে, জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে জানান,তালিকায় যেহেতু নাম আছে আমি মুক্তিযোদ্ধা।

কোথায় যুদ্ধ করেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "কোথাও করিনি। আমার বাড়িতে ক্যাম্প ছিলো। আর এগুলো নিয়ে এত ঘাটাঘাটি করার কি দরকার। যদি তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ে তবে সকল টাকা ফিরিয়ে দেবো। আর নিউজটিউজ করার কি দরকার। আমি দেখা করবো নিউজটা বন্ধ রাখেন"-জানান জিল্লুর রহমান।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ বাংলানিউজকে জানান,অবৈধ মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিতে যাচাই বাছাই করে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে। কমিটির কাছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বনে যাবার অভিযোগও আসছে। লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭
আরআই/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।