২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির শুরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে ছিনিয়ে পালানোর সময় একইদিন মির্জাপুরে গ্রেফতার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনি।
এসব তথ্য জানাচ্ছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র।
২০০৬ এর ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার হন জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খ আবদুর রহমান। ২০০৭ সালে শায়খ আবদুর রহমানসহ জেএমবির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির মধ্যদিয়ে নিষিদ্ধ এ সংগঠনের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
এরপর মওলানা সাইদুর রহমান ও সালাউদ্দিন সালেহীনের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয় জেএমবি। তাদের দু’জনের আনুগত্য প্রকাশ নিয়ে সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এতে ক্রমেই এ দু’জনের নেতৃত্ব মেনে জেএমবি দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
২০০৬ সালের ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে সালাউদ্দিন সালেহীন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে গ্রেফতার হন। ২০১০ সালের ২৪ মে হবিগঞ্জের বাসিন্দা সাইদুর রহমান তিন সহযোগী ও তৃতীয় স্ত্রীসহ রাজধানীর পূর্ব দনিয়া থেকে গ্রেফতার হন। সাইদুর রহমান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সাইদুর রহমানকে ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো একই কৌশলে ছিনিয়ে নিতে পরিকল্পনা করছে তার অনুসারীদের একটি অংশ। আরেক অংশ চাইছে, অর্থ জোগাড় করে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে।
এদিকে জেএমবির অপর অংশের নেতৃত্বদানকারী সালেহীনের অনুসারীরা বর্তমান পরিস্থিতিতেই জিহাদ করতে চাইছে। আর এজন্য ডাকাতি সেল গঠন করে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে তারা। সালেহীন ভারতে বসে জিহাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।
গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
পরদিন সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, ইংরেজি নববর্ষ ঘিরে নাশকতার উদ্দেশ্যে পুরনো জেএমবির এ দলটি একটি বাসায় বিস্ফোরক জড়ো করছিল। এছাড়া বোমা বানিয়ে ডাকাতি করে দলের জন্য অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনাও ছিল তাদের।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার ওরফে রাকিব, মো. আবু বিন সাইম ওরফে বাপ্পি ওরফে অপু, কাজী আবদুল্লাহ আল ওসমান ওরফে আহসান, মো. সোহাগ ওরফে চেয়ারম্যান ও মো. মামুন ওরফে হিমেল।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এই পাঁচ জঙ্গি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রিয়াজ, যিনি কিছুদিন আগে ভারত গিয়ে সালাউদ্দিন সালেহীনের সঙ্গে দেখা করে সেখান থেকে নির্দেশনা নিয়ে ঢাকায় আসেন।
পুরনো জেএমবি সদস্যরা ছিনতাই ও ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। টাকা ও গয়নাসহ গ্রেফতার এমন একটি গ্রুপের দেওয়া তথ্যেই দারুস সালামে অভিযান চালানো হয় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, সাইদুর রহমান কারাগারে এবং নিউ জেএমবি গঠনের পর পুরনো জেএমবি এখন নেতৃত্বশূন্য। সালেহীন বর্তমানে ভারতে আছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুরাতন জেএমবি বিচ্ছিন্নভাবে নিজেরা পুনর্গঠিত হতে চাইছে। এজন্য তারা ডাকাতি সেল গঠন করে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
তবে এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
পিএম/এসআরএস/এএ