ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ মাঘ ১৪৩১, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

এখন আমার সন্তানদের কে দেখবো?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
এখন আমার সন্তানদের কে দেখবো?

ঢাকা: ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আমার এক পা হারাইছি। আমিই একমাত্র পরিবারে উপার্জন করতাম। এখন আমার সন্তানদের কে দেখবো? তাদের ভবিষ্যতের কী হইবো? তিন মাস ধইরা হাসপাতালের বেডে শুইয়া আছি। জানি না কবে বাড়ি ফিরমু।’ 

রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) বেডে শুয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগ‍ুলো বলছিলেন কুমিল্লার রিয়াদ হোসেন।

কুমিল্লার বুড়িচং থানার কংস নগরের বাসিন্দা তিনি।

সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন এক পা। এখন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  

কংসনগর বাজারে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে চালকসহ চারজন নিহত হন। তবে এই দুর্ঘটনায় কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান রিয়াদ। প্রাণে বাঁচলেও হারিয়েছেন কর্মক্ষমতা। পঙ্গু হাসপাতালের বেডে শুয়ে এখন প্রহর গুণছেন কবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার।  

রিয়াদের মতো সড়ক দুর্ঘটনার শিকার মাদারীপুরের কালকিনির হেলাল উদ্দিন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিনি। ঢাকায় এসেছিলেন পরিবারের অন্ন যোগাতে। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালের বেডে দিন কাটছে তার। নগরীর দয়াগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় তার পা ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোমরের হাড়ও।

গেল বছরে ‍রিয়াদ, হেলালের মতো সড়ক দুর্ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়েছে ২২ হাজার পরিবার। প্রতিনিয়তই নিহতের তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষ।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং করার প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়াও চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের ঘাটতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও চলাচলের অনুপযোগী সড়কের কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।  

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৪ হাজার ৩১২টি। এতে নিহত হয় ৬ হাজার ৫৫ জন। আহত হয় ১৫ হাজার ৯১৪ জন। এর মধ্যে পঙ্গু হয়েছে ৯২৩ জন।  

বিআরটিএ’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪৮৯টি। এতে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৪২২ জন এবং আহত হয়েছে ১ হাজার ২৮৯ জন।  

পুলিশের কাছ থেকে দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে এআরআই। তাদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ১৭৫টি। এতে নিহত হয়েছে ২ হাজার ৮৪ জন এবং আহত হয়েছে ১ হাজার ৮৩৮ জন।  

এআরআই’র সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন,  জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাব বেশি। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হবে।  

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো সড়কে অনেকগুলো কোম্পানির বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও লোকাল কানেক্টিভিটি। লোকাল কানেক্টিভিটি হচ্ছে নির্ধারিত বাস স্টপেজ না থাকায় যেখানে লোকসমাগম আছে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করানো। এতে এসব এলাকায় দুর্ঘটনা বেশি হয়।  

দুর্ঘটনার জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন বুয়েটের এই বিশেষজ্ঞ। অনেক ক্রুটিপূর্ণ বাস আছে যেগুলোর ইন্ডিগেটর বিকল হয়ে আছে। ড্রাইভার অনেক সময় বুঝতে পারে না কোথায়, কত গতিতে চলছে বাসটি। এর কারণে চালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।  

পুলিশের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি মন্তব্য করে সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ল’ এনফোর্সের মাধ্যমে সড়কে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। যারা আইন লঙ্ঘন করবে তাদের যথাযথ শাস্তি দিতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করতে হবে। অদক্ষ চালকদের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করতে হবে হবে।  

যাত্রী, চালক ও জনসাধারণের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি করতে পারলে তবেই রাস্তা হবে নিরাপদ- যোগ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭

এএম/আরআর/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।