মানব পাচারের নতুন রুট পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। দেশটির রাজধানী নাইরোবি ঘিরেই জমে উঠেছে আদম পাচারের জমজমাট ব্যবসা।
এ দীর্ঘপথ পারি দিয়ে কেউ বিপাকে কেউ বা মাঝপথে ধরা পড়েই সর্বশান্ত হয়ে দেশে ফিরছেন। গত দু'দিনে কেবলমাত্র এ পথেই মানব পাচারকালে আটক করা হলো ১০৪ জনকে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দুবাই যাওয়ার সময় আটক করা হয় ৭৪ জনকে।
সন্ধ্যা ৬টায় ৩৬২ জন যাত্রী নিয়ে আরব আমিরাতের দুবাইতে যাওয়ার নির্ধারিত ফ্লাইটটির অবশিষ্ট যাত্রী নিয়েই গন্তব্যে ছুটতে হয়।
দুবাই হয়ে এদের সবার গন্তব্যই ছিলো কেনিয়ার নাইরোবিতে। সেখান থেকেই মানব পাচারের পরবর্তী গন্তব্য ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও সমুদ্রপথে ইউরোপের নানা দেশে।
যোগাযোগ করা হলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি ইমিগ্রেশন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) মুকিত হাসান খান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি জানান,পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (বিশেষ শাখা) এ্যাডিশনাল আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) ও বিশেষ সুপার মাহবুবুর রহমান (পিপিএম) স্যার আমাদের এই পথে মানব পাচারের বিষয়ে আগাম সর্তক করেছিলেন। সেই মোতাবেক বাংলাদেশ বিমানকে আমরা চিঠি দিয়ে সর্তক করেছিলাম। যাতে সন্দেহজনক কাউকে বোর্ডিং পাশ দেওয়া না হয়।
সূত্রমতে উড়োজাহাজ পরিসেবা সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশেই ট্যুরিস্ট (পর্যটক) পরিচয়ে আজো ৭৪ যাত্রীকে বোর্ডিং পাশ দেওয়া হয়।
বোর্ডিং ব্রিজ অতিক্রম করে ইমিগ্রেশনে গিয়েই "পর্যটকদের" চেহারা দেখে সন্দেহ হয় কর্মকর্তাদের। অবশিষ্ট যাত্রীদের দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহায়তায় আটক করা হয় মানব পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শরিয়তপুরের নড়িয়া থানার পন্ডিশর গ্রামের মোহাম্মদ আলী সায়ালের ছেলে ফারুক সায়াল (২৯)। তার পাসপোর্টে নম্বর বিএফ০৩৫৬৭৪২।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, দুই লাখ টাকার বিনিময়ে "পর্যটক" বেশে ভালো চাকরির আশায় তাকে কেনিয়া হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানোর কথা ছিলো।
দুবাই হয়ে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে৭১৯ ফ্লাইটে তাদের নাইরোবি যাবার কথা ছিলো। এখন ইমিগ্রেশনে ধরা পড়ায় দুই লাখ টাকাই জলে গেলো। শুন্য হাতে বাড়ি ফিরে স্বজনদের কি জবাব দেবেন। তা খুঁজে পাচ্ছেন না।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি ইমিগ্রেশন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) মুকিত হাসান খান বাংলানিউজকে জানান, অন এরাইভাল ভিসার (আগমনী ভিসা) সুবিধা নিয়ে মানব পাচারকারীরা ঢাকা থেকে কেনিয়ার নাইরোরিতে মানব পাচার করছে। যে কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দেশের মানুষগুলো ভিনদেশে গিয়ে বিপদে পড়ছে। অনেককেই আবার দুবাইতে আটকে রেখেও মুক্তিপণ আদায় করা হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। উড়োজাহাজ পরিসেবায় সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা সজাগ আর সর্তক হলেই এই সমস্যা এড়ানো যায়।
আমরা সতর্ক। কেবল এ পথে নয় অন্যপথে বেআইনিভাবে কাউকে পাচার করতে গেলেই ধরা পড়তে হবে। যোগ করেন মুকিত হাসান খান।
** শাহজালালে কেনিয়াগামী ৭৩ যাত্রী আটক
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০
এসজেএ/জেডআর/আরএ