ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ক্রিকেটার হতে চায় মেঘ, বিচার চায় বাবা-মা হত্যার 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৭
ক্রিকেটার হতে চায় মেঘ, বিচার চায় বাবা-মা হত্যার  সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: বাসায় পড়ার টেবিলে বসে গেইম খেলছিল মাহির সরওয়ার মেঘ। কেমন আছো জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর মেলে ‘ভালো’। কী করছো, সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর ‘গেইম খেলছি’। বড় হয়ে কী করতে চাও বলতেই, ‘ক্রিকেটার হতে চাই’ জবাব মেঘের।

সাগর-রুনি হত্যার পর তাদের একমাত্র সন্তান মেঘ থাকে নানী ও মামার কাছে। ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়ার একটি বাসায়।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ওই বাসায় কথা হয় মেঘের সঙ্গে। বাসায় রুনির মা নুর নাহার মির্জা এবং রুনির ভাই নওশের আলমের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।  

সাগর-রুনি ছেলে মেঘ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাসায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। সাংবাদিক দম্পতির এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের এখনও কোনো কুল কিনারা পাওয়া যায়নি।  
 
রুনির মা নুর নাহার মির্জা বাংলানিউজকে জানান, গুলশানের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে মেঘ। প্রতিদিন স্কুল থেকে আনা-নেওয়া করেন মেঘের মামা নওশের আলম। স্কুল ও লেখাপড়ার ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিটেকসহ অন্য খেলাধুলাও করে মেঘ। স্কুলে যেতে খুব পছন্দ করে সে।  

মেঘ বাংলানিউজকে জানায়, স্কুলে যেতে ভালো লাগে, ম্যাডাম অনেক আদর করে। গেইমস তার অনেক পছন্দ। তবে ক্রিকেট খেলতে বেশি ভালো লাগে। বড় হয়ে সে ক্রিকেটার হবে।

সাগর-রুনির ছেলে মেঘরুনির মা নুর নাহার মির্জা স্মৃতিচারণ করে বলেন, জন্মের পর বাবা মায়ের সঙ্গে মেঘের ভালই কেটেছে পাঁচটি বছর। তারপর হঠাৎ একদিন রাতে দুঃস্বপ্নের মতো সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়! মেঘ বাবা-মা হারিয়ে আজ এতিম। কিন্তু বিচার পায়নি বাবা-মা হত্যার।

রুনির মা বলেন, ‘২০০৬ সালের ১৬ জুন বাবা-মায়ের ঘর আলো পৃথিবীতে এসেছিল ছোট্ট মেঘ। ওর জন্মের দিনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারি না। আনন্দে মেতে ছিল সারাবাড়ি, খুব খুশি হয়েছিল ওর বাবা-মা। আজ শুধুই স্মৃতি, ভোলা যায় না।  

সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবি করে রুনির ভাই নওশের আলম বলেন, মেঘ বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে অনেক কিছু। সাগর-রুনি হত্যার বিচার হওয়া জরুরি।  
 
নওশের আলম বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দিন সে ঘুমানোর আগে বাবা-মায়ের (সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি) জন্য দোয়া করে। বাবা-মায়ের হত্যার বিচার চায়। বাবা-মায়ের কথা মনে হলে মন খারাপ করে বসে থাকে।

মেঘের মানসিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি জানান, মানসিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। আগের মতো এখন ঘুমের মধ্যে কান্না করে না।

মেঘ ও তার মামা নওশের আলমমেয়ের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন রুনির মা। বাংলানিউজকে বলেন, রুনির সেই মা ডাক এখনো আমার কানে ভাসে। দৌড়ে এসে মা মা বলে চিৎকার করত। এক মুহূর্ত ভুলতে পারি না বলেই আঁচল দিয়ে চোখ মোছেন নুর নাহার মির্জা।

হত্যা তদন্তের বিষয়ে সাগর-রুনির ভাই নওশের বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ বছর কেন সেঞ্চুরি পার হলেও এই হত্যার বিচার হবে না। সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। এছাড়া যারা তদন্ত করছে তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘হত্যার বিচার পাবো না, এ কথা মনে হলেই প্রচণ্ড কষ্ট পাই। বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। ’

পাঁচ বছর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও আজ অবধি অভিযোগপত্র দিতে পারনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৭
আরএটি/পিসি
**৪৮ ঘণ্টা থেকে ৫ বছরেও উদঘাটন হয়নি রহস্য

**সাগর-রুনি হত্যার তদন্তে আন্তরিকতার অভাব, অভিযোগ পরিবারের

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।